রাজস্থলীতে গুলিতে নিহত ৩ ব্যক্তির লাশ ময়নাতদন্তের পর বেওয়ারিশ হিসেবে সৎকার

Published: 19 Nov 2019   Tuesday   

রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার গাইন্দ্যা ইউনিয়নের ৫নং রাবার বাগানের বালুমুড়া পাড়া এলাকায় গুলিবিদ্ধ অজ্ঞাতনামা ৩ ব্যক্তির লাশ মঙ্গলবার রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত সম্পন্নের পর বেওয়ারিশ হিসেবে রাঙামাটি পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।


এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি(সন্তু লারমা) এক প্রেস বার্তায় দুই গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে জেএসএসের ৩ সশস্ত্র কর্মী নিহত হয়েছে তার সংবাদ সর্বৈব মিথ্যা, বানোয়াট, বিকৃত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত বলে দাবী করেছে।


মঙ্গলবার সকালের দিকে রাজস্থলী থানা পুলিশ অজ্ঞাতনামা ৩ ব্যক্তির লাশ রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। লাশের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে রাঙামাটি পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রাঙামাটি পৌর সভার প্যানেল মেয়র ও ৮নং ওয়ার্ডের কমিশনার মোঃ জামাল উদ্দীন জানান, নিহত তিন ব্যক্তির লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে রাঙামাটি পৌরসভাকে রাজস্থলী থানা পুলিশ হস্তান্তর করেছে। হস্তান্তরের পর বিকালে লাশগুলো শহরের আসামবস্তি শশ্মানে সৎকার  সম্পন্ন হয়েছে।


উল্লেখ্য,গেল সোমবার রাজস্থলী উপজেলার গাইন্দ্যা ইউনিয়নের ৫নং রাবার বাগানের বালুমুুড়া পাড়া এলাকায় বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে গুলির শব্দ পায় স্থানীয় লোকজন। পরে স্থানীয়রা আইন-শৃখলা বাহিনীকে খবর দেয়ার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে হাতপা বাধা ও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ৩ ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে।


অপরদিকে,মঙ্গলবার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির(সন্তু লারমা) রাঙামাটি জেলা কমিটির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক নগেন্দ্র চাকমার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় রাজস্থলী উপজেলার গাইন্দা ইউনিয়নের বালুমুড়া মারমা পাড়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র দুই গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে জেএসএসের ৩ সশস্ত্র কর্মী নিহত হয়েছে তার সংবাদ সর্বৈব মিথ্যা, বানোয়াট, বিকৃত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত বলে দাবী করেছে। এ ধরনের ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত সংবাদ প্রকাশের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করে এই ভিত্তিহীন সংবাদ প্রত্যাহার করে ঘটনার বস্তুনিষ্ট তথ্য নিয়ে যথাযথ সংবাদ প্রকাশের জন্য এসব সংবাদমাধ্যমকে আহ্বান জানানো হয়েছে প্রেস বার্তায়।


প্রেস বার্তায় দাবী করা হয় গেল ১৮ নভেম্বর সকালে স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও একটি সংস্থার সমর্থিত দলচ্যুত আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি)-এর একটি গ্রুপ অস্ত্র-শস্ত্রসহ মদ্যপ অবস্থা বান্দরবান জেলার সদর উপজেলার রাজভিলা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ৮নং নোয়াপাড়া গ্রামে প্রবেশ করে। প্রবেশ করেই তারা এলাকার যুবক ও পুরুষদের ধরপাকড় শুরু করে এবং তাদেরকে মারপিট করতে থাকে। অবশেষে বিকাল ৪টার সময় নোয়াপাড়ার কার্বারী (গ্রাম প্রধান) মোনারাম তঞ্চঙ্গ্যা (৫৫) ও তার ছেলে সুখমণি(শুক্রমনি) তঞ্চঙ্গ্যা (৩২) সহ চারজন গ্রামবাসীকে অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে এক জনকে ছেড়ে দিলেও মোনারাম তঞ্চঙ্গ্যা ও সুখমণি তঞ্চঙ্গ্যাসহ বাকী তিনজনকে সন্ধ্যার দিকে গাইন্দা ইউনিয়ন ও রাজভিলা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বালুমুড়া স্থানে নিয়ে গুলিকরে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

 

প্রেস বার্তায় আরো বলা হয়, স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর যোগসাজশে কয়েকটি সংস্থা কর্তৃক জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, খুন-খারাবি, সন্ত্রাস, অস্ত্রবাজি অভিযোগ আনার অপচেষ্টাকে বৈধতা দানের হীন উদ্দেশ্যে দলচ্যুত এএলপি নামক বিদেশী সশস্ত্র গোষ্ঠী কর্তৃক নিরীহ তঞ্চঙ্গ্যা গ্রামবাসীদেরকে নৃশংস হত্যার ঘটনাকে জনসংহতি সমিতির দু’ গ্রুপের মধ্যেকার সংঘর্ষ বলে এসব গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারণা করা হয়।


প্রেস বার্তায় দাবী করা হয়, মূলত গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা নিয়ে এএলপিকে দিয়ে শাসকদলের যোগসাজশে সরকারী বিভিন্ন সংস্থা নিরীহ গ্রামবাসীদের উপর এই হত্যার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। হত্যার শিকার এসব গ্রামবাসী জনসংহতি সমিতির কোন সদস্য নন এবং তারা কোন প্রকার সশস্ত্র তৎপরতার সাথেও যুক্ত নন। এসব কায়েমী স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এএলপিকে দিয়ে খুন-সন্ত্রাস চালিয়ে এসব এলাকার তঞ্চঙ্গ্যা গ্রামবাসীদের উচ্ছেদ করার দীর্ঘদিন ধরে অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে।


প্রেস বার্তায় অভিযোগ করে দাবী করা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ক্ষমতাসীন স্থানীয় নেতৃত্বসহ রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রত্যক্ষ মদদ ও যোগসাজশে কখনো কখনো স্থানীয়ভাবে ‘মগ লিবারেশন পার্টি’ নামে পরিচয়দানকারী এএলপি নামক বিদেশী সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং সংস্কারপন্থী খ্যাত তাঁবেদার সশস্ত্র সন্ত্রাসীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদ দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে খুন, সংঘাত, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অপহরণের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। আর এসব সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো দ্বারা সংঘটিত ঘটনাকে দোহাই দিয়ে জনসংহতি সমিতির সদস্য ও সমর্থকসহ নিরীহ গ্রামবাসীর উপর নির্বিচারে তল্লাসী, মিথ্যা মামলা দায়ের,অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন,গ্রেফতার, হত্যাসহ ফ্যাসীবাদী কায়দায়দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে।


রাজস্থলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মফজল আহম্মেদ খান জানান, অজ্ঞাতনামা তিন ব্যক্তির লাশ ময়নাতদন্তের পর বেওয়ারিশ হিসেবে রাঙামাটি পৌর সভার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় কেউ অভিযোগ না করলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

 

 

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত