রোয়াংছড়িতে আ’লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা

Published: 22 Jul 2019   Monday   

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার ২নং তারাছা ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি মংমংথোয়াই মারমাকে (৫০) দুর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করেছে। সোমবার দুপুর একটার দিকে শামুকঝিড়ি নামক এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার রোয়াংছড়িতে অর্ধ দিবস হরতালের ডেকেছে জেলা আওয়ামীলীগ।


স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সামনে রোয়াংছড়ি উপজেলায় আওয়ামীলীগের সম্মেলন উপলক্ষে সোমবার প্রস্তুতি সভা ছিল। সভা শেষ করে দুপুর ১টার দিকে রোয়াংছড়ি থেকে মোটরসাইকেলে একা বান্দরবান জেলা শহরের বাড়ির উদ্দেশ্যে ফিরছিলেন ২নং তারাছা ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি মংমংথোয়াই মারমা । এসময় শামুকঝিড়ি নামক এলাকায় পৌছলে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা একদল দুর্বৃত্ত তাকে লক্ষ্য করে ৪ থেকে ৫ রাউন্ড গুলি করে। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখতে পেয়ে তাকে উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। তাঁর শরীরে বাম হাতের নিচে বুকে দুইটি ও ডান পায়ের হাঁটুতে একটি গুলি চিহ্ন এবং মোটরসাইকেলে তিনটি মোট ছয়টি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। কারা তাকে হত্যা করেছে তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় এখনো রোয়াংছড়ি থানায় মামলা হয়নি। পুলিশও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ঘটনার প্রতিবাদে সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ-মিছিল বের করেছে।


এদিকে, জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মো: ইসলাম বেবী আঞ্চলিক সংগঠন জেএসএসকে দায়ী করে বলেন, জেএসএস আ’লীগের দূর্গ ভেঙ্গে দিতে এই ধরণে নোংরা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছে। সংঘবদ্ধ তৃণমূলের আ’লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙ্গে দিতেই একের পর এক হত্যাকান্ড ঘটাচ্ছে জেএসএস। এই ধরণের নোংরা রাজনীতি ও হত্যাকান্ড বন্ধে তিনি জোর দাবি জানান।

 

তিনি আরো বলেন, আ’লীগ নেতা হত্যার ঘটনায় প্রতিবাদ জানাতে জেলা আ’লীগ রোয়াংছড়ি উপজেলায় মঙ্গলবার অর্ধ দিবস হরতাল পালন করবে।

 

তবে এই ধরণের হত্যাকান্ডের ব্যাপারে স্থানীয় জেএসএস এর নেতারা দাবি করেছেন, তারা এমন হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত নয়। পার্বত্য চুক্তি ও পার্বত্য মানুষের অধিকার আদায়ে নিয়ম তান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করে আসছেন। রোয়াংছড়ি উপজেলা জেএসএস সভাপতি অংশৈমং মারমা জানান, এ ধরণের নোংরা রাজনীতি সঙ্গে জড়িত নয় জেএসএস। যারা এমন হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি করেছেন।


নিহতের বড় ভাই চাইহ্লাউ মারমা জানান, পথে দুর্বৃত্তরা তার ভাইকে গুলি করে নিমর্মভাবে হত্যা করেছে। তিনি এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত সবার ফাঁসি চাই দাবি জানান। তিনি আরো বলেন, তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। অথচ তাঁর সঙ্গে ঘন্টা দুয়েক আগেও মুঠোফোনে তার সাথে কথা হয়েছিল।


রোয়াংছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি চহাইমং মারমা জানান, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রুহ্লাঅং মারমা তাকে মুঠোফোনে জানায় মংমংথোয়াই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। প্রথমে তিনি সাধারণ কোনো সড়ক দুর্ঘটনা ভেবে ছিলেন। কয়েক মিনিট পরে জানতে পারলেন ছোট নয় বড় ধরণের ঘটনা হয়েছে।

 

রোয়াংছড়ি থানা ওসি শরিফুল ইসলাম জানান, সোমবার দুপুর ১টার দিকে রোয়াংছড়ি উপজেলা থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে শামুকঝিরি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মংমংথোয়াই-এর বাড়ি তারাছা ইউনিয়নে তালুকদার পাড়ায়। তবে তিনি বেশ কিছুদিন যাবত জেলা শহরের পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছেন। এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। কারা এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত এই ব্যাপারে তদন্ত চলছে।


উল্লেখ্য, বান্দরবান জেলায় এ পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনায় ৮ জন নিহত ও একজন অপহৃত হন। অপহৃত ব্যক্তির খোঁজ এখনও মেলেনি। আ’লীগ নেতা ও কর্মী নিহত হওয়ার পেছনে স্থানীয় আ’লীগ নেতারা পিসিজেএসএসকে দায়ি করে আসছেন। এদিকে পিসিজেএসএসের নেতা, কর্মী খুন ও অপহরণের পেছনে মায়ানমারের বিচ্ছিন্নতা গ্রুপ আরাকান লিবারেশন পার্টিকে (এএলপি) দায়ি করে আসছিল। স্থানীয়ভাবে এই এএলপিকে মগ পার্টি নামেই বেশি পরিচিত। এ মগ পার্টিটি সৃষ্টির পেছনে স্থানীয় কয়েকজন আ’লীগ নেতা জড়িত বলে পিসিজেএসএস দাবি করে আসছিল।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

 

 

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত