রাঙামাটি আসবাবপত্র সমিতিতে ভাঙন পাল্টাপাল্টি দুর্নীতির অভিযোগ

Published: 07 Feb 2019   Thursday   

রাঙামাটি আসবাবপত্র ব্যবসায়ীকল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের মধ্যে ভাঙন ধরেছে। যার জেরে দু’গ্রুপের বিরোধ এখন চরমে। পাল্টাপাল্টি বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলছে উভয় গ্রুপ। এ নিয়ে প্রকাশ্য অভিযোগ করছে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনে।

 

বৃহস্পতিবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন দিদারুল আলম ও আবদুল ওয়াদুদ এর নেতৃত্বাধীন আহবায়ক কমিটি। 

 

শহরের রেইনবো রেস্টুরেন্টে আহূত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন আবদুল ওয়াদুদ। এ সময় অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটির আহবায়ক দিদারুল আলম, আবদুল খালেক, মহিন উদ্দিন পেয়ারু, আবদুল করিম বালি, জাহাঙ্গীর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলা হয়, সমিতির অযোগ্য ব্যব¯া’পনা কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম শামীম ও সাধাণ সম্পাদক আবদুল শুক্কুরের নেতৃত্বাধীন কমিটির সদস্যরা ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত। তারা সমিতির বিপুল টাকা আত্মসাৎ করে চলেছেন। তারা নিয়মিত হিসাব-নিকাশ দেন না। নিয়মিত সভা করেন না। সমিতির অফিসে থাকেন না। অফিসে প্রায় সময় তালা দিয়ে রাখেন। বার্ষিক সাধারণ সভাও করেননি। বিভিন্ন অনুদানের নাম দিয়ে নিজেরা সমিতির বিপুল টাকা আত্মসাৎ করছেন। গত এক মাসে সমিতির কাউকে না জানিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের যুগ্ম স্বাক্ষরে ৫০৪২৫০৭ নম্বরধারী চেকে ৩ লাখ এবং ৫০৪২৫০৮ নম্বরধারী চেকে ২ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে তুলে আত্মসাৎ করেছেন। তাদের এসব অনিয়ম দুর্নীতির কারণে তারা অযোগ্য ও অবৈধ। ফলে আমরা ৩৩৮ সদস্যের সমিতির অধিকাংশ সদস্য মিলে অন্তর্বতী আহবায়ক কমিটি করেছি। ৪ ফেব্রুয়ারি তাদের সংবাদ সম্মেলনে তারা যেসব অভিযোগ করেছেন, সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কাল্পনিক।   

 

এর আগে ৪ ফেব্রুয়ারি আহূত সংবাদ সম্মেলনে দিদারুল আলম ও আবদুল ওয়াদুদ গংয়ের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, চুরি ও লুটপাটের অভিযোগ করেছেন, সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম শামীম ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল শুক্কুরের নেতৃত্বাধীন গ্রুপ। ওই সময় রাঙ্গামাটি জেলা ও সদর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও উৎকোচ, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন তারা। ওইদিন শহরের কাঠালতলীর সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলা হয়, সমিতির বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ শেষ না হওয়া স্বত্ত্বেও এবং বিধি অনুযায়ী সব কর্মকান্ড পরিচালনা করা হলেও দুর্নীতিগ্রস্ত জেলা ও সদর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার যোগসাজশে রাঙামাটি আসবাবপত্র ব্যবসায়ীকল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতিকে ধ্বংস করতে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত নির্বাচনে পরাজিত কতিপয় কুচক্রী। তারা বিধিবহির্ভূতভাবে একটি অবৈধ অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে আমাদের সমিতিকে ভাঙতে অপচেষ্টা চালায়। পরে আমাদের আপিলে ওই কমিটি বাতিল ঘোষণার জারি করেছে, চট্টগ্রামের বিভাগীয় সমবায় দফতর। মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে এসব ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন, জেলা সমবায় কর্মকর্তা ইউসুফ হাসান চৌধুরী ও সদর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আশিষ কুমার দাশ।

 

লিখিত বক্তব্যে সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম শামীম বলেন, ২০১৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতিতে আবদুল ওয়াদুদ, মহিউদ্দিন পেয়ারু, কামাল উদ্দিন, দিদারুল আলম, আবুল কাশেম, জাহাঙ্গীর আলম গংয়ের নেতৃত্বে ৩০-৪০ লোক সমিতির কার্যালয়ে অনুপ্রবেশ করে। ওই সময় তারা সমিতির গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, স্বাক্ষর করা চেকের পাতা এবং সঞ্চয় আমানতের ৬০-৭০ হাজার টাকা লুট করে।

 

তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সরাসরি নির্বাচনে সমিতির সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির কর্মকর্তারা নির্বাচিত হয়েছেন। আমরা সমবায় আইন ও বিধি মোতাবেক সমিতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। এ অবস্থায় নির্বাচনে পরাজিতদের যোগসাজশে এবং তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে জেলা ও সদর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা নির্বাচিত কমিটি ভেঙে দিয়ে গত ৬ জানুয়ারি একটি অবৈধ অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটি করে দেন। পরে ১৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমবায় দফতরের যুগ্ম নিবন্ধক বরাবরে আমরা আপিল করি। আপিলে তাদের অবৈধ অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটি বাতিল ঘোষণা করে তার আদেশ জারি করেন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমবায় দফতরের যুগ্ম নিবন্ধক। এ ছাড়াও জেলা ও সদর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার বদলির দাবিতে আমরা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আবেদন করেছি।

 

চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমবায় দফতরের যুগ্ম নিবন্ধক আশীষ কুমার বড়ুয়ার স্বাক্ষরে জারি করা রায়ের আদেশে বলা হয়, রাঙ্গামাটি আসবাবপত্র ব্যবসায়ীকল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা নির্বাহে রাঙ্গামাটি জেলা সমবায় কর্মকর্তার অনুমোদনে গঠিত অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটি যথাযথ নয় মর্মে বিবেচিত হওয়ায় তা বাতিল করা হল।

 

এ বিষয়ে জানতে ফোনে যোগাযোগ করা হলে জেলা সমবায় কর্মকর্তা ইউসুফ হাসান চৌধুরী বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অনিয়ম, দুর্নীতি ও উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। আমি শুধু একটি এডহক কমিটির অনুমোদন দিয়েছিলাম। তা পূর্ণাঙ্গ কমিটি নয়। সেটি টাকার বিনিময়ে অনুমোদন করিনি। 

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত