পাহাড়ে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোকে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের আহ্বান

Published: 06 Oct 2018   Saturday   

শনিবার রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির উদ্যোগে পাহাড়ে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত নিরসহ বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।  

 

সভায় বিশিষ্টজনরা পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলকে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করে সংলাপের মাধ্যমে সব সমস্যা সমাধানের উপায় খুজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন বলেছেন,সংঘাত সহিংসতার মাধ্যমে নয়, পারষ্পরিক  সমঝোতা, সহাবস্থান ও সংলাপের মাধ্যমে সমাধান খুজে পাওয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেছে। একই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র সংখ্যা জাতিদের জন্য কোটা বহাল রাখারও দাবী জানিয়েছেন।

 

শহরের একটি রেষ্টুরেন্টে আয়োজিত মতনিমিয় সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান। অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্যে দেন  খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বোধিসত্ব চাকমা, শিক্ষাবিদ মধু মঙ্গল চাকমা, জুম লিয়ান আমলাই, সাবেক সরকারী কর্মকর্তা সুকুমার দেওয়ান, কাজল তালুকদার, এ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা, নারী নেত্রী শাপলা ত্রিপুরা, কালায়ন চাকমা, ধীমান খীসা, বিশ্বকল্যাণ চাকমা, ভদ্রসেন চাকমা, বিল্টু চাকমা প্রমুখ। অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মংসানু চৌধুরী।  মতবিনিময় সভায় তিন পার্বত্য জেলা থেকে সমাজের বিশিষ্টজনরা ছাড়াও ছাত্র ও যুব সমাজের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।

 

তারা বলেন, এই সংঘাতে জুম্ম সমাজ সমাজ কেবল ধনে-জনে চরম ক্ষতির শিকার হচ্ছে না, মানসিকভাবেও পর্যদুস্ত হয়ে হতাশা প্রান্তসীমায় পৌছেছে। অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে জিঘাংসার চোরাবালিতে হারিয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আজ আমরা অন্ধ,বেপোয়ারা নির্মম হয়ে উঠেছি। এই প্রতিহিংসা ও জিঘাংসা ইতি টানতে হবে।

 

বক্তারা সম্পাদিত পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন তথা জুম্ম জনগনের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সংগ্রাম অপরিহার্যও বলে মন্তব্য করেন।  

 

বক্তারা বলেন, পাহাড়ে আর কোন শিশুকে অনাথ হতে না হয় আর কোন বোনকে বিধবা হতে না হয়। এ জন্য পাহাড়ের নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে আত্নঘাতি ও ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতের বিরুদ্ধে “না” বলতে হবে। ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে হবে।

 

শিক্ষাবিদ প্রফেসর মংসানু চৌধুরী তার প্রবন্ধে বলেন, পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের অব্যহতি পরপরই চুক্তিকে ঘিরে রাজনৈতিক মত র্পাথক্য দেখা দেয়। এক পক্ষ চুক্তিকে জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার একধাপ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচনা করে ,আরো এক পক্ষ চুক্তিতে জনগনের মৌলিক অধিকার সংরক্ষিত হয়নি বলে দাবী করে আসছে। এই মত র্পাথক্য এক র্পযায়ে সংঘাতে রূপ নেয়। এই সংঘাতে এখন নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। প্রথম দিকে এই সংঘাত জেএসএস ও ইউপিডিএফ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো। কিন্তু এখন দু দল থেকে চার দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।বিগত প্রায় দু বছর ধরে সংঘাত বন্ধ ছিলো।

 

কিন্তু গেল বছর ইউপিডিএফ গনতান্ত্রিক গঠন হওয়ার পরপরই আবার নতুন করে বহু মুখী দ্বন্দসংঘাত শুরু হয়েছে।  পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে এ পর্ষন্ত ৮শ এর বেশী রাজনৈতিক নেতাকর্মী  প্রতিদ্বন্ধি পক্ষের পরষ্পরের হামলায় খুন হয়েছে। শুধুমাত্র গত বছর ডিসেম্বর থেকে এ পর্ষন্ত ৪০ জন নিহত হয়েছে। শুধু গেল বছর  ডিসেম্বর ১৭  থেকে ৪০ জন নিহত হয়েছেন। এই খুনোখুনি ও প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি আমাদের ভবিষ্যতের জন্য বড় অশনি সংকেট।

 

এতে তিনি আরো বলেন, পার্বত্য  চুক্তি বাস্তবায়নের দিকে তাকাই তার চিত্রও হতাশাজনক। চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে দু`দশক পার হয়ে গেলেও চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন এখনো ঝুলে আছে। চুক্তির শর্ত অনুসারে বিশেষ শাসন ব্যবস্থা র্নিবাচনের মাধ্যমে গঠিত হতে পারেনি, গনতন্ত্রায়ন ঘটেনি।বন ও ভূমির  অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত