এমএন লারমার জীবন দর্শন ও রাজনৈতিক জীবন সংগ্রামকে তরুন প্রজন্মকে নতুন করে ভাবতে হবে-সন্তু লারমা

Published: 15 Sep 2018   Saturday   

মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার(এমএন লারমা) তার জীবন দর্শন, রাজনৈতিক জীবন সংগ্রাম ও তার স্বপ্নকে বাস্তবায়নে এগিয়ে নিতে যারা বয়সে তরুন তাদেরকে নতুন করে ভাববার আহ্বান জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা(সন্তু লারমা)।

 

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আজ পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে চারিদিকে হতাশা-নিরাশার হাহাকার বিরাজ করছে। প্রতিদিন পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ তাদের জমি-জমা হারাচ্ছে,লাঞ্চিত বঞ্চিত ও মা-বোনেরা কোন না কোনভাবে অপমানিত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে শোষন নিপীড়ন চলছে এতে এখানকার প্রতিটি মানুষ একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যত দিন কাটাতে হচ্ছে। বর্তমান শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে যে আচরণ ও দমন নিপীড়ন চালাচ্ছে  তা অচিরেই জুম্ম জনগণ তাদের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলতে পারে।

 

শনিবার রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সংসদ মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার(এমএন লারমা) ৭৯তম জন্ম  দিন উপলক্ষে আয়োজিত প্রধান অতিথির বক্তব্যে সন্তু লারমা এসব কথা বলেন।

 

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি,গিরিসুর শিল্পি গোষ্ঠী ও এমএন লারমা মেমোরিয়েল ফাউন্ডেশনের যৌথ  উদ্যোগে জেলা শিল্পকলা চত্বরে আয়োজিত আলোচনা সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক সত্যবীর দেওয়ানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন চাকমা সার্কেল চীফ বারিষ্টার দেবাশীষ রায়  ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান।

 

অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্যে দেন এমএন লারমা  মেমোরিয়েল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা, কবি প্রমোদ বিকাশ কারবারী,পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির রাঙামাটি শাখার সাধারন সম্পাদক জোনাকি চাকমা,পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক রামবাই পাংখোয়া। স্বাগত বক্তব্যে রাখেন  এমএন লারমা মেমোরিয়েল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা।

 

আলোচনা সভা শেষে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরুস্কার বিতরণ করেন অতিথিরা। পরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।

 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সন্তু লারমা আরো বলেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই পার্বত্য চুক্তি কিন্তু ৭২ সালের যে চার দফা দাবী বাংলাদেশ সরকারের কাছে তুলে ধরা হয়েছিল সেই আলোকের ভিত্তিতে জনসংহতি সমিতি জুম্ম জনগনের পক্ষে ৫দফা দাবি উপস্থাপন করেছিল এবং এ ৫ দফা দাবী পরবর্তীতে সংশোধিত আকারে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি রচিত হয়েছে। এই চুক্তির মধ্যে যা কিছ্রু অধিকার প্রদান করা হয়েছে তা ৭২ এর যে চার দফা দাবী এমএন লারমা রাজনৈতিক অবস্থান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বুকে একটা শোষনহীন, বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা লড়াই সংগ্রামের বিটকে শক্ত করার জন্য। কিন্তু চুক্তির ২০ বছর অতিবাহিত হলেও চুক্তি বাস্তবায়িত হতে পারেনি। কেন তার বাস্তবায়িত হচ্ছে না তা আমাদের কাছে দিবালোকে মতো স্পষ্ট। শাসক গোষ্ঠীরা চাই পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৪টি জাতি গোষ্ঠীর অস্তিত্বকে বিলুপ্ত করতে। পার্বত্যাঞ্চল মুসলিম অধ্যূষিত অঞ্চলের পরিণত হোক এটাই শাসক গোষ্ঠীরা চাই।

 

সন্তু লারমা বলেন, মহান নেতা এমএন লারমা ১৯৬০ দশকের দিকে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলে। তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামে যে নেতৃত্ব চলছে সেই নেতৃত্ব দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বুকে মুক্তি আনা সম্ভব হবে না। তাই তিনি ৬০এর দশকের শুরুর দিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে নতৃন আশা-আকাংখা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন। সবচেয়ে প্রগতিশীল,গণতান্ত্রিক, জাতীয়তাবাদী আদর্শের আলোকে তিনি এ নেতৃত্ব গঠনের এগিয়ে গেছেন। তিনি আমরণ পর্ষন্ত পর্ষন্ত তার নেতৃত্ব গঠনে তার জীবনকে নিবেদিত করেছেন। এ জন্য দেখি ১৯৬০ সাল থেকে শুরু থেকে ১৯৭০ সাল এর শুরু পর্ষন্ত এই পার্বত্যাঞ্চলের বুকে নেতৃত্ব গঠনে একটা সংগঠনের প্রতিষ্ঠা লড়াই সংগ্রাম করেছিলেন। এই সংগ্রামে সবচেয়ে অগ্রনী ভূমিকা ছিল এমএন লারমার।

 

তিনি আরো বলেন এমএন লারমার নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে যুব সমাজে রচিত হয়েছে রাজনৈতিক অধ্যায়। যদি ১৯৩৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর এমএন লারমার জন্ম না হতো তাহলে অনাগত দিনগুলোতে পার্বত্য চট্টগ্রারে বুকে নতুন কোন  নেতৃত্ব জন্ম হতো না। যে নেতৃত্বের মধ্যে ছিল প্রগতিশীল,গণতান্ত্রিক,অসাম্প্রদায়িক,জাতীয়তাবাদের আদর্শ। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে নতুন করে আশা-আকাংখার উজ্জীবিত করেছিলেন। এতো কম বয়সে এমএন লারমা জুম্ম জাতীয় জীবনে দ্রুব নক্ষত্র হিসেবে অর্ভিভাব হয়েছিলেন এটাই ছিল এখানকার বাস্তবতা। তিনি প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের দল গঠন করেছিলেন।  

 

সন্তু লারমা বলেন, এমএন লারমা ছিলেন জুম্ম জাতী চেতনায় অগ্রদূত। তিনি ঘুমন্ত জাতিকে জাগ্রত করেছিলেন। যে জাতি তাদের অধিকার নিয়ে সচেতন ছিল না, যে জাতি  ঘুণে ধরা সামন্তবাদী নেতৃত্বের নিমজ্জিত  থেকে  তার সব কিছুই হারাতে শুরু করেছে। সেই জুম্ম জাতিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছিলেন। তাই আজকে সেই বাস্তবতাকে নতুন প্রজন্মকে ভাবতে হবে।

 

আলোচনা সভায় সভায় বক্তারা বলেন, এমএন লারমা মেহনতি মানুষের একজন মহান নেতা ছিলেন।  তাই তার আদর্শ,চিন্তাভাবনাকে বুকে ধারন করে এবং তার যে আশা-অকাংখা ও স্বপ্ন ছিল তা বাস্তবায়নে সবাইকে  ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি সম্পাদিত পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে  সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন-সংগ্রামে সামিল হতে হবে।   

 

উল্লেখ্য, ১৯৩৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রাঙামাটির মহাপ্রুম এলাকায়(বর্তমানে কাপ্তাই বাধের কারণে নিমজ্জিত) জন্ম গ্রহন করেন। ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর বিভেদপন্থীদের হাতে তার আট সহযোগীসহ তিনি নিমর্মভাবে নিহত হন।

--হিলবিডি২৪/সিআর.

 

 

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত