খাগড়াছড়ির ৩ কৃতি জাতীয় ফুটবল কন্যা

Published: 25 Aug 2018   Saturday   

বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল মহিলা টিমের কথা বললে উঠে আসে খাগড়াছড়ি জেলার তিন নারী কৃতি ফুটবলারের কথা। যারা ছোট কাল থেকেই নিজের প্রচেষ্টায় উঠে এসেছেন প্রত্যান্ত এলাকা থেকে।

 

খাগড়াছড়ি জেলার শহরের খুব কাছের গ্রাম হলে ও অবহেলি একটি গ্রামের নাম সাত ভাইয়া পাড়া। গ্রামের অধিকাংশ লোকজন খেতে খাওয়া। সেই গ্রামে জন্ম বর্তমান জাতীয় দলের দুই নারী ফুটবলার দুই জমজ বোন আনুচিং ও আনাই মগিনী। অন্য দিকে জেলা সদর থেকে প্রায় ৬০ কিলো এবং উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলো দুরে বর্মাছড়িতে জন্ম গ্রহন করেন মনিকা চাকমা। বর্তমানে তিন জনে থাকেন ঢাকায়। কোন বিশেষ বন্ধ পেলে বা ছুটি পেলে ছুটে আসেন খাগড়াছড়িতে বাবা মা ও নিজের আত্মীয় স্বজনকে দেখতে।

 

খাগড়াছড়ির সাত ভাইয়া পাড়া গ্রামে বেড়ে ওঠা দুই জমজ বোনের ছোট কাল থেকে তাদের শখের খেলা ছিল ফুটবল। শখের বসে বাবা মার কাছে থেকে অনেকটা ছুরি করে তখনকার রেজিষ্টার্ড সাত ভাইয়া পাড়া স্কুল মাঠে(বর্তমানে সরকারী) ছেলেদের সাথে ফুটবল খেলা খেলতো দুই বোন। কখনো বল না পেলে জাম্বুরাকে বল বানিয়ে খেলা খেলেছে তারা।

 

আনুচিং ও আনাই এর বাবা রিপ্রু মগ ও মা আপ্রুমা মগিনী। তারা চার ভাই ও চার বোন অবশ্যই বড় ভাই আর বেঁেচ নেই। তবুও তার বাবা মা ভুল পারেনি সেই ছেলেকে । তার বাবাকে প্রশ্ন করা হলে বলেন, আমার চার ছেলে চার মেয়ে। বর্তমানে তিন ভাই, চার বোন সবার ছোট দুই জমজ বোন আনুচিং ও আনাই মগিনী।


আনুচিং ও আনাই ২০১১ সালে সাত ভাইয়া স্কুল থেকে বঙ্গমাতা গোল্ড কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ করে। খাগড়াছড়িতে তাদের দল চ্যাম্পিয়ন হয়। পরে বিভাগীয় পর্যায়ে চট্টগ্রামে খেলে। তাদের দল পরাজিত হলে পরে রাঙ্গামাটির ঘাগড়ার মগাছড়ি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বীরসেন চাকমা তাদের নিয়ে যায় গিয়ে ঢাকায় জাতীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ করে দেয়। এর পর তারা থেকে ৫ম শ্রেনি পর্যন্ত বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্ণামেন্টে অংশ গ্রহর করেছিল।


পরে তারা সাত ভাইয়া পাড়া রেজিষ্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়(বর্তমানে সরকারী) থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় পাশ করলে খাগড়াছড়ি এপিবিএন হাই স্কুলে ভর্তি হলে আর্থিক অনটনের কারনে পড়াশুনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।

 

তাদের বাবা রিপ্রু মগ দুঃখ করে বলেন এপিবিএন স্কুলে পড়ার সময় প্রথম সাময়িক পরীক্ষার সময় পাচঁ দিতে পারেননি বলে শিক্ষকরা পরীক্ষা দিতে দিচ্ছিলো না, পরে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা না দিয়ে আবার ঘাগড়ার সেই মগাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বীর সেন চাকমা খবর পেয়ে তাদের নিয়ে নিজ খরচে ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন। এর পর তাদের জাতীয় দলের খেলা শুরু হয়।


তাদের বাবা রিপ্রু মারমা দুঃখ করে আরো বলেন রাঙামটির ঘাগড়ার মগাইছড়ি স্কুলের প্রধান শিক্ষক না হলে দুই বোনের পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যেতো। এর আগে আর্থিক অনটনের কারনে তাদের এক মেয়ে পড়াশুনা বন্ধ হয়।


আনুচিং ও আনাই বলেন খাগড়াছড়িতে নারী ফুটবলারদের প্র্যাকটিসের জন্য কোন আলাদা মাঠ নেই । সরকার যেন অচিরে নারী ফুটবলারদের জন্য উপযুক্ত খেলার মাঠ তৈরি করেন দেন। সুযোগ পেলে আরো অনেক নারী খেলোয়ার উঠে আসবে বলে তাদের ধারনা।


বর্তমানে আনুচিং খাগড়াছড়ি সরকারী মহিলা কলেজের এইচএসসি ১ম বর্ষের ছাত্রী আর আনাই আগামী বছর ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেবেন।


সর্বশেষ সাফ অনুর্ধ ১৫ নারী ফুটবলে নান্দনিক খেলে দৃষ্টি কাড়ে সবার। ফুটবলের মাধ্যমে এই দুই বোন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে চান বহুদূর। বিশ^কাপে আনাই এর প্রিয় দল আর্জেটিনা প্রিয় খেলোয়ার মেসি আর আনুচিং এর প্রিয় দল ব্রাজিল প্রিয় খেলোয়ার নেইমার।


অন্যদিকে বাংলাদেশ নারী ফুটবলের জাতীয় দলের আরেক অহংকার মনিকা চাকমার বাড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার দূর্গম বর্মাছড়িতে। উপজেলা সদর প্রায় ১০ কিলোমিটার দুরে পায়ে হাটা পথ। সে ও বাবার কাছ থেকে অনেকটা ছুরি করে ফুটবল খেলতো। পরে বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্ণামেন্টে খেলার সুযোগ পেয়ে জাতীয় দলে খেলার সুযোগ হয়। বর্তমানে তিন জনই জাতীয় দলে খেলছে।

 

খাগড়াছড়ির স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থার উন্নয়ন কর্মী লোক জ্যোতি চাকমা ও বেসরকারী চাকরি জীবি সুকাটন চাকমা বলেন আনাই আনুচিং ও মনিকা চাকমা তারা সবাই আমাদের জেলার তথা দেশের জন্য সম্পদ তারা দেশের সুনাম রক্ষা করছে। তারা আরো ভালো খেলোক এই প্রত্যাশা তাদের।

 

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী চলতি অর্থবছরের মধ্যেই আনাই-আনুচিং ও মনিকা চাকমার ঘর পূন:নির্মাণ করার প্রতিশ্রুতি দেন। তিন ফুটবল কন্যার জন্য ৫০ হাজার টাকা করে এফডিআর, শিক্ষাবৃত্তিসহ তাঁদের জন্য করণীয় সব দায়িত্ব পালন করবে জেলা পরিষদ এই বলে ঘোষনা ও দিয়েছিলেন গত জানুয়ারী মাসে।

 

আনাই,আনুিচং ও মনিকা চাকমা আশা করেন অচিরেই খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী তার দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এই বছরই তাদের বাড়ীঘর নির্মাণ করে দিয়ে ঘোষিত প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন।

 

আনাই, আনুচিং ও মনিকাদের খেলাধূলা দেখে অনুপ্রেরিত হচ্ছে অন্যান্য মেয়েরাও। খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে নিয়মিত অনুশীলন চলে নারী ফুটবলারদের। তাদের জন্য পৃথক খেলার ব্যবস্থা করার দাবী উঠেছে। অবশ্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন ক্রীড়া সংস্থা সংশ্লিষ্টরা।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত