উড়ো ও মিথ্যা খবরের বিশ্বাসে আলীকদম থেকে কিছু পাহাড়ী পরিবারের দেশ ত্যাগ !

Published: 19 Mar 2018   Monday   

জমি,নগদ অর্থসহ বিভিন্ন সহায়তা দিচ্ছে এমন উড়ো ও মিথ্যা খবরের বিশ্বাসে বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা থেকে কিছু  পাহাড়ী পরিবার দেশ ত্যাগ করে মিয়ানমারে চলে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

 

তবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে উপজেলায় বসবাসরত পাহাড়ী জনসাধারণকে এই ধরনের মিথ্যা ও উড়ো কথা বিশ্বাস না করতে সকল জনপ্রতিনিধিদের এলাকায় পাঠানো হয়েছে বলে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আমিরুল কায়ছার জানিয়েছেন

 

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চাষের জমি, গরু, প্রতিমাসে রেশন ও চাষাবাদের উপকরণ, থাকার জায়গা এবং নগদ অর্থ সহায়তা দিচ্ছে এমন উড়ো ও  মিথ্যা খবরের বিশ্বাসের  উপর গেল ৬ মাসের মধ্যে বান্দরবানের আলীকদম ইউনিয়নের সীমান্ত সংলগ্ন ৪নং কুরুকপাতা ইউনিয়নের ৫ ওয়ার্ডের ৯টি পাড়া থেকে ২৬ পরিবারের ১৩৯ জন বাংলাদেশী নাগরিক জন্ম ভূমি ছেড়ে চলে গেছে।  তবে যারা গেছে তারা এখন কি অবস্থায়  রয়েছে  দেশে থাকা তাদের আত্মীয় স্বজনরা এখন পর্যন্ত কেউ সংবাদ পায়নি বলে জানান কয়েজন নিকট আত্মীয়রা। এ ছাড়া উপজেলার  ৩ নং নয়াপাড়া ইউনিয়নের বাসুদেব কারবারী চাকমা পাড়া থেকে গত এক মাসে ৪টি চাকমা পরিবার ও ৪টি তঞ্চঙ্গা পরিবার মিয়ানমারে চলে গেছে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও এলাকাবাসীরা নিশ্চত করেছেন।

 

এদিকে গেল ১৪ মার্চ বুধবার দুপুর ১২টার সময় সীমান্ত সংলগ্ন উপজলার কুরুকপাতা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের রালাই ম্রো পাড়ার বাসিন্দা প্রো ওয়াই ম্রো(৪০)পিতা- মৃত-ইয়ং ম্রো তার চার সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে উড়ে কথায় বিশ্বাস করে বাড়ী থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটারের মতো পাহাড়ী পথ বেয়ে দেশ ছেড়ে মিয়ানমার  সীমানায় ঢুকে পড়লে তাদের(মিয়ানমার) সীমানায় পুঁতে রাখা স্থলমাইন বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই প্রো ওয়াই মারা যায়। এ সময় প্রো ওয়াই এর স্ত্রী ও দু সন্তান স্থল মাইন বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হয়। আহতরা বর্তমানে চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। মিয়ানমার অংশে পুঁতে রাখা স্থলমাইন বিস্ফোরণে নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনার পর বিষয়টি প্রশাসনসহ সকলের নজরে আসে।

 

এ ঘটনায় আলীকদম উপজেলা প্রশাসন জরুরী ভিত্তিতে গেল ১৫ মার্চ উপজেলা পরিষদ হলরুমে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, সাধারণ পুরুষ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্যদের নিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ে বৈঠক করেন।

 

আলীকদম উপজেলার নয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যন ফোগ্য মারমা জানান, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চাকমা ও তঞ্চঙ্গা সম্প্রদায়ের দুই পাড়া থেকে আরো ৫ থেকে ৬  পরিবার দেশ ত্যাগ করে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।  

 

সূত্র জানায়, আলীকদমের কুরুপপাতা ইউনিয়ন থেকে যারা মিয়ানমারে চলে গেছে তারা হলেন,  ৫নং ওয়ার্ডের রালাই পাড়া থেকে- লিংক্লাং ম্রো পিতা- রাতুই সহ চার জন সদস্য, সাকনাউ ম্রো পিতা- নিয়াসউ সহ ছয়জন, মেনডং ম্রো পিতা-মেনলকসহ ছয়জন সদস্য, মেন ইয়া ম্রো পিতা- পালেসহ ছয় জন, আরোই ম্রো পিতা- লংনাথসহ চারজন, মাংরুম পাড়া থেকে- রেংথই ম্রো পিতা- রিংকুইসহ পাঁচজন, থংওয়াই ম্রো পিতা- রেংনংসহ চার জন, মুকাং ম্রো পিতা-মেনরাউসহচারজন সদস্য, রিসা ম্রো পিতা-দুই ওয়াইসহ চারজন সদস্য, তেইচ্চা পাড়া থেকে - চংমং  কারবারী পিতা- তেকচাসহ পাঁচজন সদস্য, দুইডক ম্রো পিতা- তেইচ্চাসহ ৭জন সদস্য, ওয়াইলক ম্রো পিতা-চিংতাইসহ আটজন,  দির ওয়াই ম্রো পিতা- মপংসহ এগারজন, কাইপ্রিয়া ম্রো পিতা- মেনক্রাতসহ বারজন, মেন চুং পিতা-কাইপ্রিয়াসহ সাতজন, বুত্তোপাড় থেকে- লংলং ম্রো পিতা-কা পেয়সহ পাঁচজন, ছেতং ম্রো পিতা- মেববতসহ পাঁচ জন, সাকলান ম্রো পিতা- বালিকংসহ তিনজন, মেননি পাড়া থেকে- মেনচং ম্রো পিতা- ইউলুইসহ চারজন, মেনইয়ম পাড়া থেকে - রুতুই ম্রো পিতা- মেনইয়মসহ পাঁচজন, পারাউ পাড়া থেকে- রেংছং ম্রো পিতা- অজ্ঞাতসহ চারজন, কাইম্পা ম্রো পিতা- কমলাইসহ পাচজন, কাম ইয়েন ম্রো পিতা- রেংহিনসহ ৩জন, মেনডন পাড়া থেকে- পাংলুই ম্রো পিতা-অজ্ঞাতসহ পাঁচজন। আলীকদমের নয়াপাড়া ইউনিয়ন থেকে যারা দেশ ছেড়ে চলে গেছে তারা হলেন, বাসু দেব চাকমা পাড়ার বাসিন্দা- যুদ্ধ মনি ত্রিপুরা পিতা- আনন্দ লাল চাকমা, দোরাইল্লা চাকমা পিতা- কান্ত মনি চাকমা, অনিল বরল চাকমা পিতা- অঞ্চল চাকমা, উথোয়াই চিং তঞ্চঙ্গ্যা পিতা- অজ্ঞাত। এছাড়া একই ইউনিনের যোগেন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা পাড়ার বাসিন্দা -  জগদিশ তঞ্চঙ্গ্যা পিতা- চন্দ্রমান তঞ্চঙ্গ্যা, মংক্য তঞ্চঙ্গ্যা পিতা- ভাগ্য মনি তঞ্চঙ্গ্যা, চই পুঁচা তঞ্চঙ্গ্যা পিতা- অজ্ঞাত, উসাঅং তঞ্চঙ্গ্যা পিতা- চিং পু অং তঞ্চঙ্গ্যা।

 

আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আমিরুল কায়ছার জানান, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলে গেলে নাকি তাদের চাষের জমি, গরু ও চাষাবাদের উপকরণ, থাকার জায়গা ও নগদ অর্থ সহায়তা দিবে এ রকম উড়ো কথা আলীকদম উপজেলায় বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী জসাধারণের মাঝে বয়ে বেড়াচ্ছে। আর সেই উড়ো কথায় বিশ্বাস করে উপজেলা থেকে কিছু পাহাড়ী পরিবার চলে গেছে এমন কথা শুনছি। এমন সংবাদ পাওয়ার পর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে  উপজেলায় বসবাসরত জনসাধারণকে এ রকম মিথ্যা ও উড়ো কথা বিশ্বাস না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এ সংবাদটি দ্রুত পৌঁছে দেয়ার জন্য সকল জনপ্রতিনিধিদের এলাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

 

তিনি আরো জানান, এ রকম উড়ো কথা বিশ্বাস করে এলাকার পাহাড়ী বাসিন্দারা দেশ ত্যাগ করে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত পরিস্থিতিতে এলাকার মানুষের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন আনতে উপজেলা প্রশাসন জরুরী ভিত্তিতে সরকারের চলমান অতিদরিদ্র কর্মসৃজন কর্মসূচী, টিআর, কাজের বিনিময়ে টাকা, ভিজিএফ ও জিআর কর্মসূচীর কার্যক্রমের জন্য কুরুকপাতা ইউনিয়নের সকল দূর্গম এলাকায় পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। 

 

আলীকদম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম বলেন, গেল এক বছরের মধ্যে আলীকদম উপজেলা থেকে কিছু  পাহাড়ী  পরিবার মিয়ানমারে চলে গেছে। আরো কিছু পাহাড়ী পরিবার গোপণে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহসা এ বিষয় নিয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে তিনি মত দেন।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত