লামায় ১০৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৯টিতে শহীদ মিনার রয়েছে!

Published: 20 Feb 2018   Tuesday   

ভাষা আন্দোলনের ৬৬ বছরেও বান্দরবানের লামা উপজেলায় বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গড়ে উঠেনি শহীদ মিনার। এমনকি উপজেলা সদরেও নেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। উপজেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ-মাদ্রাসা কিন্ডারগার্টেন মিলে ১০৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৯টি প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে।


উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে সেগুলোও অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে রয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকার কারণে এবং প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যথাযথভাবে দিবসটি পালন না করায় অধিকাংশ শহীদ মিনারে ২১ ফেব্রুয়ারি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় না।


কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনারে স্থানীয় রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান মাঝে মধ্যে ফুল দিয়ে থাকে। তবে ভাষা আন্দোলন বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কোনো আয়োজন হয় না। ফলে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা সম্পর্কে কিছু শিখতে বা জানতে পারছে না।


লামা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মোঃ নুরুল আলম। তার কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তৎকালীন সময়ে সাবেক মহকুমা লামায় কোন শহীদ মিনার না থাকায় আমি নিজে উদ্যোগ নিয়ে বিদ্যালয়ের অর্থায়নে ১৯৮০ সালে এ শহীদ মিনারটি স্থাপন করেন। এর পর বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে আমি জাতীয় দিবস গুলো পালন করতে শুরু করি। এখনো এ শহীদ মিনারটি ব্যবহার করে আসছেন প্রশাসন থেকে সকলে।


বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর লামা উপজেলা কমান্ডার শেখ মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশ স্বাধীন হলো ৪৬ বছর আর মাতৃভাষা অর্জিত হলো ৬৬ বছর। কিন্তু লামা উপজেলায় এখনো পর্যন্ত প্রশাসনের উদ্যাগে কোন শহীদ মিনার স্থাপন হয়নি। বিষয়টি খুব দুঃখ্যজনক । আমরা প্রশাসনকে বারবার অবহিত করেছি একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার তৈরীর উদ্যোগ নিতে।


উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা যতীন্দ্র মোহন মন্ডল বলেন, সরকারী ৮৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শুধু মাত্র ১টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। এছাড়া ৬টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে কোন শহীদ মিনার নেই।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উপজেলার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক মিলে ২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি হাইস্কুলের মধ্যে ৭টিতে শহিদ মিনার রয়েছে, ৩টি কলেজের মধ্যে ২টিতে শহিদ মিনার নেই। এ ছাড়া একটি ফাযিল(ডিগ্রি)মাদ্রাসাসহ ৪টি মাদ্রাসা ও ৩টি বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে কোনো শহীদ মিনার নেই।


তিনি আরো বলেন, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা প্রয়োজন। এ কাজে ম্যানেজিং কমিটি অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে।

 

লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খিন ওয়ান নু এপ্রতিবেদককে বলেন, তিনি এ উপজেলায় যোগদান করার পর উপজেলা পর্যায়ের কোন শহীদ মিনার না থাকায় ২০১৭ সালের গত ১৪ মার্চ একটি পূর্নাঙ্গ শহীদ মিনার স্থাপন করার জন্য পার্বত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এর চেয়ারম্যান বরাবরে একটি লিখিত আবেদন করেছেন। উপজেলা প্রশাসনের নিজ উদ্যোগে শহীদ মিনার তৈরী করার তেমন ব্যবস্থা না থাকায় হয়তো এতদিন কেউ উদ্যোগ নেয়নি।


তিনি আরো জানান,চেষ্টা করা হচ্ছে এ উপজেলায় একটি পূর্নাঙ্গ শহীদ মিনা স্থাপন করতে। পাশাপাশি বিদ্যালয় গুলোতেও আশানুরুপ এখনো শহিদ মিনার গড়ে উঠেনি। বর্তমানে উপজেলা প্রশাসন থেকে অর্ধকিলোমিটার দূরে লামা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারটিতে উপজেলার সকল জাতীয় দিবস গুলো পালন করতে যেতে হয়।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত