লংগদুতে অগ্নিকান্ডের ঘটনার ৮মাসেও ক্ষতিগ্রস্ত ১৭৬ পরিবারকে পূনর্ববাসন করা হয়নি

Published: 11 Feb 2018   Sunday   

রাঙামাটির লংগদুতে স্থানীয় যুবলীগের নেতা হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে তিনটি পাহাড়ী গ্রামে অগ্নিসংযোগের ঘটনার ৮মাসেও ক্ষতিগ্রস্ত ১৭৬ পরিবারকে পূনর্ববাসন করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ন প্রকল্প থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়ার রয়েছে। তবে উপজেলা প্রশাসন থেকে ঘর নির্মাণের জন্য দু’দুবার টেন্ডার আহ্বান করলেও টাকার পরিমাণ কম হওয়ায় কোন ঠিকাদার টেন্ডারে অংশ গ্রহন করেননি। ফলে ক্ষতিগ্রস্তরা টঙ ঘর নির্মাণ করে মানবতের জীবন যাপন করছেন। 

 

সম্প্রতি অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত লংগদুর তিনটি পাহাড়ী গ্রাম বাত্যাপাড়া, তিনটিলা ও মানিকজোড় ছড়া এলাকায় সরেজিমনে গিয়ে দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্তরা টঙ ঘর নির্মাণ করে কোন রকমে দিন যাপন করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ঘটনার ৮মাস পরও পুড়ে যাওয়া ঘরে চিহিৃত এখনো রয়েছে।


ছায়ারাণী চাকমা, কালাচন চাকমা, নির্মালা চাকমা, ননাবী চাকমা, রিপন চাকমাসহ অনেক ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন,পুড়ে যাওয়া স্থানে টঙ ঘর নির্মাণ করে কোন রকমে দিনাতি পাত করছেন। সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঘর নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও আট মাস অতিবাহিত হলেও তার বাস্তবায়ন করতে পারেনি। শুধুমাত্র দুই বান্ডিল ঢেউ টিন ও ৩০ কেজি চাল দেয়ার ছাড়া আর কিছুই পায়নি তারা। বর্তমানে পরিবারের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে কুড়ে ঘরের মধ্যে থেকে কোন রকমে তীব্র শীত পাড় করে দিচ্ছেন। তবে আগামী কয়েক মাস পরে বর্ষা মৌসুম শুরু হলে কিভাবে মাথা গুজাবেন তা তাদের কিছুই জানা নেই। তারা অবিলম্বে ঘর নির্মানের অর্থ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্তদের প্রদান এবং রেশনের বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানোর পাশাপাশি অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।


অগ্নিকান্ডে মামলার বাদী ও বাত্যপাড়ার বাসিন্দা সমীরণ চাকমা জানান, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করার কারণে মামলার আসামীরা প্রতিনিয়ত তাকে হুমকি দিচ্ছে। তিনি তার নিরাপত্তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানান। তবে লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার সামন্ত জানান, মামলার বাদীকে আসামীরা হুমকি দিচ্ছে তা থানায় অভিযোগ জানালে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় এ দুটি মামলা পুলিশের হেডকোয়াটারের নির্দেশে সিআইডি চট্টগ্রামে জোনের অধীনে তদন্তাধীন রয়েছে। এ দুটি মামলায় ২৯জনকে আটক করা হলেও তারা সবাই জামিনে রয়েছেন।


জানা গেছে, অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি পাহাড়ী গ্রামে প্রাথমিক অবস্থায় ২১৩টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ তালিকা করা হলেও পরবর্তীতে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ইউপি চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ১৭৬টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রকৃত তালিকা করা হয়েছে। বাকী ৩৮টি পরিবার ছিল আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ও ভাড়াটিয়া ছিল। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের পূর্নবাসনের লক্ষে প্রতিটি বাসগৃহের জন্য ৩ কক্ষ বিশিষ্ট সেমি পাকা ঘর, ১টি রান্নাঘর ও ১টি শৌচাগারের জন্য প্রাক্কালিত মূল্য আইটি ভ্যাটসহ ৫লাখ ২৫ হাজার টাকার বরাদ্দ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে প্রতিটি বাসগৃহ নির্মানের জন্য চাহিদা অনুযায়ী আইটি ভ্যাট শতকরা ১০ শতাংশ বাদ দিয়ে ৪ লাখ ৭২ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৭৬টি ঘর নির্মানের জন্য দুই বার টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। তবে এ টেন্ডারে কোন ঠিকাদার অংশ গ্রহন করেননি।


একাধিক সূত্র মতে,১৭৬টি বাড়ী নির্মানের জন্য ৯কোটি ৪০ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করা হলেও বর্তমান বাজার মূল্য বাজেটে কম হওয়ায় এবং যে তিনটি স্থানে ঘর নির্মাণ করা হবে সেখানকার ঘরগুলো একাধিক স্থানে হওয়াতে মালামাল নিতে খরচ বেশী পড়ার কারণে ঠিকাদার নির্দিষ্ট সময়ে সিডিউল ড্রপ করেনি।

 

জেলা প্রশাসক মোঃ মানজারুল মান্নান বলেন, ১৭৬টি বাড়ী নির্মাণে প্রথম ও দ্বিতীয় বার দরপত্র আহ্বান করা হলেও কোন ঠিকাদার দরপত্রে অংশ গ্রহন অশ গ্রহন করেননি। দরপত্রের দাম অনেক কম হওয়ায় ঠিকাদার আগ্রহী হচ্ছে না। তাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয় প্রকল্প পরিচালকের কাছে ৪ গ্রুপের জায়গায় ৮ থেকে ৯ গ্রুপ বৃদ্ধি এবং মালামালের দাম বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করা হবে। এ ব্যাপারে এক দুদিনের মধ্যে চিঠি পাঠনো হবে।


তিনি আরো জানান, রেশনের পরিমাণ কম হওয়ার কথা নয়। কারণ সরকারের একটা নীতিমালা রয়েছে। হঠাৎ করে একটার জন্য নীতিমালার পরিবর্তন হয় না। তারপরও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে জেলা পরিষদসহ অন্যান্য সংস্থা থেকে রেশন, খাদ্য দ্রব্য, কাপড়-চোপড় ও ঢেউ টিন বিতরণ করা হয়েছে। এক বছরের জন্য প্রতি পরিবারকে ৩০ কেজি করে ৮৬ মোঃটন চাউল বরাদ্দ করা হয়েছে। যাতে সবাই সমপরিমাণ রেশন রেশন পায়।


প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য,২০১৮ সালের ১ জুন দিঘীনালা-খাগড়াছড়ি সড়কের খাগড়াছড়ি সদর থানার চার মাইল এলাকায় স্থানীয় যুবলীগ নেতা মো. নুরুল ইসলাম নয়নের লাশ পাওয়া যায়। পরদিন ২ জুন সকালে লংগদুর বাত্যাাপাড়া থেকে লংগদু সদর পর্যন্ত লাশ নিয়ে স্থানীয় বাঙালীরা মিছিলের সময় তিনটিলা,মানিকজোড় ছড়া ও বাত্যাপাড়ায় পাহাড়ীদের ঘর বাড়ীতে অগ্নিসংযোগ করে অভিযোগ। অগ্নিকান্ডে ১৭৬টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ন পুড়ে যায় এবং ৩৮টি বাড়ী আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আগুনে পুড়ে মারা যান গুণামালা চাকমা নামে এক বৃদ্ধা। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের পর ২৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া যুবলীগ নেতা হত্যাকান্ডের ঘটনায় ১০ জুন রনেল চাকমা ও জুনেল চাকমা দুজনকে গ্রেফতার করে সিআইডি।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত