পার্বত্য চুক্তির শতভাগ বাস্তবায়নের দাবিতে নাগরিক সমাজের প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি

Published: 30 Jan 2018   Tuesday   

মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির শতভাগ বাস্তবায়নের দাবিতে  জনযাত্রার আয়োজন ও  প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য পাদদেশে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জনউদ্যোগ জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব তারিক হোসেন মিঠুলের সঞ্চালনায় সংহতি বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির তথ্য ও প্রচার বিভাগের সদস্য দীপায়ন খীসা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, ঐক্যন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য এবং মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদাক সঞ্জীব দ্রং। এছাড়াও সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন আইইডির নির্বাহী পরিচালক নুমান আহম্মেদ খান, আরডিসির জান্নাত-ই ফেরদৌসী, শাহজাহান আলী সাজু, সোহেল হাজং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অনুরাগ চাকমা, কাপেংয়ের হিরণমিত্র চাকমা, টিশেল চাকমা, বিসিএইচআরডির নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল হক, আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি হরেন্দ্রনাথ সিং, সাসুর সাবেক সভাপতি সুবোধ এম বাস্কে, জনউদ্যোগ জাতীয় কমিটির সদস্য শাহজাহান আলী সাজুসহ বিভিন্ন জাতীয় প্রগতিশীল, সাংস্কৃতিক ও আদিবাসী ছাত্র সংগঠনের   নেতৃবৃন্দ।

 

কর্মসূচিতে সহযাত্রী হিসেবে জনউদ্যোগ, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ, আদিবাসী যুব পরিষদ, সান্তাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, মাদল, চানচিয়া, হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স ফোরাম, ওয়াইপিজে, কাপেং ফাউন্ডেশন, আইইডি, আরডিসি, বিসিএইচআরডি অংশগ্রহণ করে।

 

সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে মাদলের প্রতিবাদী গানের তালে তালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদানে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় অভিমুখে জনযাত্রা আরম্ভ করা হয়। জনযাত্রাটি শাহবাগে এসে পুলিশি বাঁধার সম্মুখীন হলে সেখান থেকে ৫ সদস্যর একটি প্রতিনিধি দল উক্ত স্মারকলিপিটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় অভিমুখে যাত্রা করেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন তারিক হোসেন মিঠুল, জান্নাত-ই ফেরদৌসী, সোহেল হাজং, শাহজাহান আলী সাজু এবং হরেন্দ্রনাথ সিং। পরে মাদলের প্রতিবাদী গানের তালে তালে জনযাত্রাটি আবার টিএসসিতে আসে এবং সেখানেই সমাবেশ শেষ  হয়।

 

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির শতভাগ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বলেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর দেশের পার্বত্য অঞ্চলে দীর্ঘদিনের অস্থিরতা কাটিয়ে সেখানে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। অথচ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে স্বাক্ষরিত এ চুক্তির ২০ বছর অতিক্রান্ত হলেও  সুষ্ঠু ও যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ার দরুন পাহাড়ে সেই কাঙ্খিত শান্তি এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বরং সেখানকার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতি প্রতিনিয়ত নির্যাতন নিপীড়নের মাত্রা বেড়ে চলেছে। তাদের উপড় নির্বিচারে আক্রমণ, অপহরণ, ঘরবাড়িতে আগুন, জোরপূর্বক ও অবৈধভাবে ভূমি বেদখল করে সেখানে নানা স্থাপনা নির্মাণের জন্য উচ্ছেদ অব্যাহত রয়েছে।

 

বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি আদিবাসীদের দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠী তাদের নিজেদের আত্মনিয়ন্ত্রনাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ ২৫ বছর অগণতান্ত্রিক পন্থায় সংগ্রাম করেছিল । দেশের সার্বভৌমত্ব, অখন্ডতার প্রতি আস্থা রেখে তারা তাদের স্বীয় মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি করেছিল। সে চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলোর মধ্যে ভূমি অধিকার, অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্থসহ ভারত প্রত্যাগত   শরণার্থীদের পুনর্বাসন, অস্থায়ী সেনাক্যাম্প  প্রত্যাহার, সেটেলার বাঙালীদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজক পুনর্বাসন, স্থায়ী অধিবাসীদের নিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদসমূহে সকল প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করা ছিল অন্যতম । চুক্তির আজ ২০ বছর অতিক্রান্ত হবার পরও এ সকল মৌলিক বিষয়গুলো আজ অবধি অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়ে গেছে। এমতাবস্থায় পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক সুশাসন, গণমুখী ও সুষম উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে এবং ঐ অঞ্চলের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য পার্বত্য চুক্তির শতভাগ বাস্তবায়নের বিকল্প নেই বলেও বক্তারা দাবী করেন।

 

সমাবেশ থেকে  ৫ দফা দাবিনামা উত্থাাপন করা হয়। সেগুলো হল পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির শতভাগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার স্থায়ী সমাধান,পাহাড়ের যে কোন উন্নয়ন প্রকল্প পরিকল্পনায়,  সিদ্ধান্ত গ্রহণে সেখানকার অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব নিশ্চিত করা, গেল ২০ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘঠিত সকল অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা, সকলপ্রকার হয়রানিমূলক ধড়পাকড় বন্ধ ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে নিয়ে আনতে হবে এবং আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়। 

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত