লংগদুতে পাহাড়ী গ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলা ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে ঢাকায় নাগরিক প্রতিবাদ সমাবেশ

Published: 04 Jun 2017   Sunday   

লংগদুতে পাহাড়ি গ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলাকারী ও অগ্নিসংযোগকারীদের অচিরেই গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবীতে রোববার ঢাকায় নাগরিক সমাজ বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।

 

সচেতন নাগরিক সমাজের উদ্যোগে ঢাকার শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে  সমাবেশে  বিশিষ্ট কলামিস্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সদস্য উষাতন তালুকদার এমপি, সাবেক তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের সদস্য খুশী কবীর, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিয়াউদ্দিন তারিক আলী, বিশিষ্ট নাট্যকার মামুনুর রশীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবি মুহাম্মদ সামাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেজবাহ কামাল, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রাণা দাশ গুপ্ত, মানবাধিকার কর্মী নুমান আহম্মদ খান, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের প্রেসিডিয়াম সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন, যুব মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সভাপতি সাব্বাহ আলী খান কলিন্স, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, জাস্টিস এন্ড পিস কমিশনের থিওফিল নকরেক, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি জি এম জিলানী প্রমুখ।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. জোবাইদা নাসরিন কণার সঞ্চালনায়  প্রতিবাদ সমাবেশে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে মূল বক্তব্য ও দাবীনামা পেশ করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন।

 

প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে টিএসসি গিয়ে শেষ হয়।

 

সৈয়দ আবুল মকসুদ  কোন গণতান্ত্রিক দেশে গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে এই ধরনের ঘটনা সত্যিই ন্যক্কারজনক ও নিন্দনীয়  উল্লেখ কওে  তিনি বলেন,  একটা খুনের বিপরীতে কেন ৩০০ টি ঘরবাড়ি স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃংখলা বাহিনীর উপস্থিতিতে পুড়িয়ে দেয়া হবে। তিনি এই ঘটনার সাথে জড়িতদের তদন্তপূর্বক দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টন্তমূলক শাস্তির দাবি করেন এবং লংগদুতে পাহাড়ীদের বাড়িঘর নির্মানের দাবি জানান ।

 

অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন,কেউ যদি সন্ত্রাসী হামলায় শিকার হয়ে মারা যায় তাহলে সেখানে দেশের রাষ্ট্রীয় আইনে দোষীদের শাস্তি দেয়া উচিত। কিন্তু সেটা না করে  সেখানে পাহাড়ীদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার কোন যোক্তিকতা আসে না ।

 

উষাতন তালুকদার এমপি  উদ্দেশ্যমূলক ও পরিকল্পিতভাবে হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে  উল্লেখ করে তিনি বলেন, লংগদু পাহাড়ীরা বারবার এই ধরনের হামলা শিকার হয়েছে । ১৯৮৯ সালে ৪মে সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল। এযাবত এধরনের ঘটনার কোনটাই বিচার হইনি।  পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো সরকার বাস্তবায়ন করছে না। পাহাড়ীরা এখন মানবেতর দিনযাপন করছে।

 

তিনি লংগদু ঘটনার দোষীদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং অগ্নিসংযোগ ও সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ  এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবীর  পাশাপাশি নুরূল ইসলাম নয়নের হত্যাকারীকে আইনের আওতায় এনে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দেয়ার দাবী  জানান।

 

খুশি কবির  বলেন, লংগদু ঘটনায় দেশের সরকার নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। এদেশে একটি ধর্ম, ্একটি জাতি ছাড়া অন্য কাউকে বাচতে দেয়া হবে না, তাদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা ন্যক্ষারজনক।

 

নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন, দেশে অসংখ্য ঘটনা ঘটছে। কোনো সভ্য দেশে এমন নৃশংস ঘটনা ঘটতে পারে? আইনের লোকেরা কোথায় ছিল? দুঃখের বিষয়, এই রাষ্ট্রকে কিছুতেই মানবিক করা যাচ্ছে না। এই ঘটনা নিন্দনীয় এবং  প্রতিবাদ জানাচ্ছি। দীর্ঘ তিন ঘন্টাব্যাপী আগুন জ্বলছে। কোথায় গেলো আইনশৃংখলা বাহিনী।

 

রূহিন হোসেন প্রিন্স বলেন পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য চুক্তি বাস্তবায়ন কোন বিকল্প নেই । আইন-শৃংখলা বাহিনীর উপস্থিতিতে সেখানে সেটেলার বাঙালীদের  প্রতিবাদ সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয় এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে  কোন অপ্রীতিকর ঘটনা  ঘটবে না বলে আশ্বস্থ করা হয় । অথচ সাম্প্রদায়িক হামলা, অগ্নিসংযোগ, হত্যা সংগঠিত হলো।  আমরা এই ঘটনার বিচার চাই।

 

মানবাধিকারকর্মী নুমান আহম্মেদ খান বলেন, বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি দূর করার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।

 

রানা দাশ গুপ্ত বলেন, এদেশে ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু মানুষের কোন নিরাপত্তা নেই । অথচ বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ও অবদান ছিল তারা ও মুক্তিযুদ্ধে সামিল হয়েুছিল । লংগদুর ঘটনা খুবই ন্যক্কারজনক বলে  তিনি  করেন । তিনি এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণের দাবি করেন । একই সাথে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে জোর শাস্তি দাবি জানান।

 

নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে রবীন্দ্রনাথ সরেন অগ্নিসংযোগ ও সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ এবং তাদের জীবন ও জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা,পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ, দ্রুত ও যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য অবিলম্বে সময়সূচি ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ ঘোষণা ইত্যাদি দাবি তুলে ধরেন।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত