পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা(সন্তু লারমা) পার্বত্য চট্টগ্রামে যে শোষন-নিপীড়ন-নির্যাতন ও প্রতারণা চলছে তার বিরুদ্ধে মোকাবেলা করতে এবং সমাজে পার্বত্য নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা জন্য নারীদের বিপ্লবী আদর্শের প্রতি আরো বেশী নিবেদিত হয়ে আন্দোল-সংগ্রামে সামিল হওয়ার জন্য নারী সমাজকে আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন,পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিটি নর-নারীর নূন্যতম অধিকারের জন্য যে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও সরকার তথা শাসকগোষ্ঠীর যাদের মধ্যে জাতিগতভাবে জাত্তাভিমান,সম্প্রদায়গতভাবে মৌলবাদীর সাম্প্রদায়িকতা রয়েছে সেই কারণে আজকে পার্বত্য চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়িত হতে পারছে না।
আর্ন্তজাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বুধবার রাঙামাটিতে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে সন্তু লারমা এসব কথা বলেন।
সন্তু লারমা আরো বলেন, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ প্রতিষ্ঠা না হলে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় । প্রগতিশীল ও সাম্যবাদী চিন্তাধারা বিকশিত করে বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। নারীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হলে সাম্যবাদী আদর্শ লালন করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মধ্যে দিয়ে নারী পুরুষের যে অধিকার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে তা প্রতিষ্ঠায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা না হলে নারী অধিকারও প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
“নারী পুরুষের বৈষম্যহীন সমাজ গড়ি- পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন জোরদার করি” এই প্রতিপাদ্য নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি ও হিল উইেেমন্স ফেডারেশনের উদ্যোগে জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলানায়তনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান। পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির সভাপতি জড়িতার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন এমএন লারমা মোমোরিয়েল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা, পার্বত্য জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা মঙ্গল কুমার চাকমা,সংস্কৃতি কর্মী শিশির চাকমা। বক্তব্যে দেন হিল উইেেমন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সঞ্চনা চাকমা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির জেলা শাখার সভাপতি অরুন ত্রিপুরা।
এর আগে একটি বর্নাঢ্য র্যালী জেলা শিল্পকলা একাডেমী চত্বর থেকে শুরু করে বনরুপা এলাকা ঘুরে গিয়ে আবারও শিল্পকলা একাডেমী চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। এতে বিভিন্ন নারী সংগঠনসহ নানান পেশা শ্রেনীর নারী-পুরুষ অংশ গ্রহন করেন।
সন্তু লারমা বলেন, বিপ্লবী আদর্শকে প্রধান্য দিয়ে নারীর মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থা শ্রেণী বিভক্ত। এ সমাজে জাতিগত, সম্প্রদায়গত ও অর্থনৈতিক বৈষম্য বিদ্যমান রয়েছে। এ সমাজে নারীর স্থান পুরুষের অধীনে। সার্বিকভাবে এখানে নারীর যে জীবনধারা তারা সব সময় নির্যাতিত, অবহেলিত, উপেক্ষিত, বঞ্চিত এবং শোষিত হয়ে আসছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে গৌতম দেওয়ান বলেন, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা ও শ্রেণী বিভক্ত সমাজ ব্যবস্থার কারণে বাংলাদেশে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না। প্রশাসনে, রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে কিন্তু সামগ্রিকভাবে নারীদের পরিবর্তন হচ্ছে না। আইন দিয়ে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না, সামাজিকভাবে পরিবর্তন আনতে হবে।
আলোচনা সভায় আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, সমাজের অর্ধেক অংশ নারীদের অবহেলিত বঞ্চিত রেখে কোন সমাজ যেমনি অগ্রগতি লাভ করতে পারে না তেমনি নারীর উপর রাষ্ট্রীয় বৈষম্য,জাতিগত সম্প্রদায়িক সহিংসতা নিপীড়ন ও বঞ্চ জিইয়ে রেখে কোন দেশে গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জাতির উপর জাতিগত নিপীড়ন ও সহিংসতা থেকে জুম্ম নারীর মুক্তি ও নিরাপত্তার লক্ষে এবং সমঅধিকার ও সমর্যাদা প্রতিষ্ঠার স্বার্থে সম্পাদিত পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নের দাবী জানান।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.