আদিবাসী সমাজ ব্যবস্থায় বিবাহের সনদ না থাকায় বিবাহ অস্বীকার প্রবণতা বেড়েছে

Published: 06 Mar 2017   Monday   

আদিবাসী নারী  নেতৃবৃন্দ বলেছেন, আদিবাসী সমাজ ব্যবস্থায় বিবাহের সনদ বা দালিলিক প্রমাণপত্র না থাকার কারণে অনেক সময় বিবাহ অস্বীকার প্রবণতা ইদানিং বেড়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ নারী তার স্বামীর ঔরষজাত সন্তানের লালন পালনে কোন প্রকার ভরন পোষন আদায় করতে পারছে না। এতে  নারী ও সন্তানেরা উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনেক সময় নারীকে প্রকৃত বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে কিনা না তার প্রমাণে বেগ পেতে হয়। 

 

সোমবার রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথাগত আইন সংস্কার ও নারীর প্রতি বৈষম্য দুর করার লক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সন্মেলনে এক কথা বলেন নারী নেতৃবৃন্দ।

 

আশিকা হলরুমে আয়োজিত সংবাদ সন্মেলনে নেতৃবৃন্দ বিবাহ সনদ প্রদান  ও গ্রহনের মাধ্যমে নারী পুরুষের বিবাহ সংক্রান্ত দালিলিক করনের মাধমে বিবাহের বৈধতা ও সন্তানদের উত্তরাধিকার প্রদানসহ আদিবাসী নারীদের বিচারিক সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্তের দাবী জানান।

 

বাংলাদেশ নারী প্রগিতি সংঘের সহযোগিতায় ও  উন্নয়ন সংস্থা প্রোগ্রেসিভের আয়োজনে সংবাদ সন্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটি সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস  চেয়ারম্যান রীতা চাকমা।  স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা প্রোগ্রেসিভের নির্বাহী পরিচালক সূচরিতা চাকমার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন নারী নেত্রী নুকু চাকমা। সংবাদ সন্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন আশিকা মানববিক উন্নয়ন  কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক এ্যাডভোকেট কক্সি তালুকদার।

 

সংবাদ সন্মেলনে বলা হয়, আদিবাসী নারীরা নানান প্রকার অসমতা এবং নির্যাতনের শিকারে পরিণত হচ্ছে ক্রমাগত। উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে পুরুষদের একছত্র আধিপত্য এখনো বিরাজমান আদিবাসী সমাজ ব্যবস্থায়। এ অবস্থা পরিবর্তন প্রয়োজনীয়তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ১৯০০ সালের শাসনবিধি এবং প্রচলিত প্রথা ও রীতিনীতি নারীদের আশা-আকাংখার প্রতি কতটুকু সংবেদনশীল তথা যত্নবান।

 

সংবাদ সন্মেলনে আরো বলা হয়, নারী সংসারের আর্থিক স্বচ্ছলতা আনায়ন থেকে সংসারের যাবতীয় ক্ষেত্রে তার গুরুত্বপূর্ন আবদান পালন করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সেটা বাপের বাড়ি হোক অথবা স্বামীর বাড়ী হোক। প্রচলিত এ রীতিনীতি নারী ক্ষমতায়নকে উৎসাহিত করবে না বরং নারীকে অনেকটা পিছিয়ে দেয়। পাশাপাশি অর্থ অর্জনের পর সেই অর্থ খরচ এবং পরিবারের অন্যান্য সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রক্রিয়াতে নারী অংশ গ্রহন একেবারেই নেই। এ ধরনের রীতিনীতি কোন অবস্থাতে একজন নারীকে কর্ম উদ্যোগী করতে উৎসাহিত করবে না।

 

সংবাদ সন্মেলনে বলা হয়, চাকমা সার্কেলের প্রধানে ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ও উদ্যোগে হেডম্যান ও কারবারী পাশাপাশি নারী কারবারী নিয়োগ প্রদান করেছেন এবং তারা নানান প্রকার সামাজিক বিচার কার্যে সহযোগী প্রদান করে আসছেন। কিন্তু অন্য দুই সার্কেল মং ও বোমাং সার্কেল এই বিষয়টি এখনো উপেক্ষিত রেখেছে।

 

সংবাদ সন্মেলনে প্রথাগত রীতিনীতি,রেওয়াজ, বিচার ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং নারী বান্ধব করার মাধ্যমে নারীদের আতœবিশ্বাস পথকে সুপ্রশস্ত করতে ও পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী নারীর উন্নয়ন মাধ্যমে সমগ্র আদিবাসী জাতিসত্বার উন্নয়ন সুনিশ্চিত করতে ১৪ দফার সুপারিশ করা হয়। সেগুলোর মধ্য অন্যতম হল- নারী নেতৃত্ব সৃষ্টি করার লক্ষে পুরুষের পাশাপাশি যোগ্যতা সম্পন্ন নারীদেরকে হেডম্যান অথবা কারবারী নিয়োগের জন্য প্রথাগত তিন সার্কেল চীফকে আরো বেশী মাত্রায় মনোযোগী হতে হবেন,আদিবাসী নারীদের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মনীতি জন্য স্ব-স্ব সমাজকে উদ্যোগ গ্রহন, নারীদের প্রথাগত বৈষম্যমূলক ও অনৈতিক শাস্তির বিধান রহিত করে সকল প্রকার প্রথাগত শাস্তির বিধান লিখিতরুপে সংরক্ষন করা, চাকমা রাজা কার্যালয়ের বিভিন্ন পরামর্শকমূলক স্মারক বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহন, প্রথাগত পদগুলোতে নারীর স্থলভিষিক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক কর্মকান্ড রহিত করা যাতে নারীরা সে পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পথ কন্টকমুক্ত হয়, জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে আদিবাসী নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, সামাজিকভাবে আদিবাসী নারীর সন্মান অক্ষুন্ন রাখার জন্য পুরুষদেরও এগিয়ে এসে সমতা নিশ্চিত করা,সমমানের কাজের ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি আদিবাসী নারীর সমান মজুরী নিশ্চিত করা।

 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাঙামাটি সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রীতা চাকমা বলেন, সম্পাদিত পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীদের উন্নয়ন ও ক্ষমতা সম্ভব নয়। তাই চুক্তি বাস্তবায়নে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত