রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রবর্তিত ৪র্থ শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষায় বৃত্তিপ্রাপ্ত কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে গতকাল সোমবার সনদপত্র ও বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ ফিরোজা বেগম চিনু রাঙামাটিসহ পার্বত্যাঞ্চলকে পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করে এখানকার মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব বলে মন্তব্য করে বলেছেন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি কিংবা জঙ্গীবাদ কখনো শান্তি আনতে পারে না। শান্তির জন্যও প্রয়োজন পারিবারিক নৈতিক শিক্ষা। তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাব বজায় রেখে এলাকার সামাজিক শৃংখলা রক্ষায় সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
রাঙামাটি সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে জেলা পরিষদ সদস্য হাজী মূছা মাতব্বের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা, পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম জাকির হোসেন ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মাহাবুবুর নবী,জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান। অনুষ্ঠানে বক্তব্যে রাখেন কাউখালী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পরিনয় চাকমা অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা মেধায় দুই হাজার, ট্যালেন্টপুলে দেড় হাজার, সাধারণ গ্রেডে এবং অন্যান্য মেধায় এক হাজার করে নগদ অর্থসহ প্রত্যেককে সনদ পত্র ও ক্রেষ্ট প্রদান করেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রবর্তিত ৪র্থ শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষায় রাঙামাটির দশ উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৩ হাজার ২৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে এ বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে ২হাজার ৫৮৫ জন। এর মধ্যে অনন্য মেধায়,ট্যালেন্টপুল ও সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পায় মোট ৪০৮জন শিক্ষার্থী। অনন্য মেধায় ৩০জন, ট্যালেন্টপুলে ১শ জন, সাধারণ গ্রেডে ২৭৮জন এবং অন্যান্য মেধায় ৪৬ জন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফিরোজা বেগম চিনু এমপি আরো বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি পারিবারিক নৈতিক শিক্ষা দিয়ে শিশুদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন ডিজিটাল প্রযুক্তিতে দেশ এগিয়ে গেলেও এর কিছু অপব্যবহারের ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে। তাই ডিজিটাল প্রযুক্তির অপব্যাবহার বন্ধে পারিবারিক নৈতিক শিক্ষা বাড়াতে হবে।
তিনি উন্নত বিশ্বের সাথে দেশকে এগিয়ে নিতে তথ্য প্রযুক্তির সদ্ব্যবহারে মনোযোগী হতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা বলেন, পাহাড়ের প্রত্যেকটি শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার সযোগ সৃষ্টি করতে এবং মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে জেলা পরিষদ কাজ করে যাচ্ছে। প্রত্যন্ত স্কুলগুলোতে শিক্ষক সংকট নিরসন করে অচিরেই শুন্য পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
তিনি পার্বত্য জেলা পরিষদের এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন প্রাথমিক শিক্ষার গুনগত মানউন্নয়নে শিক্ষার্থীদের অবিভাবক ও শিক্ষকদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশী। তাই প্রতিটি শিশুর শিক্ষা নিশ্চিত করতে অবিভাবক ও শিক্ষকদেরও প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া ।
তিনি স্কুলে কোন শিশুকে বেত্রাঘাত না করার জন্য শিক্ষকদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, এ বিষয়ে সরকারী সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতয় ঘটছে। এমন আচরণ থেকে নিবৃত থাকতে তিনি শিক্ষকদের প্রতি আহবান জানান। তিনি শিশুদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে জাতির আগামী দিনের কান্ডারী হিসাবে গড়ে তুলতে শিক্ষকদের পাশাপশি অভিভাবকদেরও জোর প্রচেষ্টা চালাতে আহ্বান জানান তিনি।
জেলা পরিষদ সদস্য হাজী মুছা মাতব্বর বলেন, রাঙামাটি অনেক প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে শিক্ষকরা স্কুলে পাঠদান করছেন। শিশুদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। কিন্তু এ শিক্ষকরা একেবারে শান্তিতে নেই। এ অঞ্চলের সন্ত্রাসীরা শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অংকের চাদাঁ নিচ্ছে। যা অত্যন্ত দুঃখের ও লজ্জার।
স্কুরে শিক্ষক সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পার্বত্য জেলা পরিষদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ করতে হয়। কিন্ত এ কোটায় প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দিতে না পারায় পদগুলোর বড় একটা অংশ অপূরণ থাকে যে কারণে জনবল সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে।
তিনি এ সংকট নিরসনে সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন মন্তব্য করে বলেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুুলে ধরার জন্য সাংসদ ফিরোজা বেগম চিনুরকে অনুরোধ জানান।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.