খাগড়াছড়িতে নৌবাহিনীর কমান্ডারের হাতে জেলা ক্রীড়া সংস্থা’র সেক্রেটারী শারীরিক লাঞ্চিত

Published: 25 Sep 2016   Sunday   

নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জুয়েল চাকমাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। রোববার বেলা পোনে ১২টায় খাগড়াছড়ি পুলিশ লাইন্স পুকুরে সাঁতার প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি চলাকালে এই ঘটনা ঘটেছে।


এদিকে, এ ঘটনায় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী এক বিবৃতিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবী জানিয়েছেন।


অভিযোগে জানা যায়, বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশন ও নৌ বাহিনীর যৌথ উদ্যোগে ‘সেরা সাঁতারুর খোঁজে বাংলাদেশ’ নামে সারা দেশে সাঁতারু অন্বেষণের কার্যক্রম চলছে। এরই অংশ হিসেবে রোববার বেলা পোনে ১২টায় খাগড়াছড়ি পুলিশ লাইন্স পুকুরে সাঁতার প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি চলাকালে তুচ্ছ বিষয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লে: কর্ণেল এস এম মাসুদুর রহমান খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জুয়েল চাকমার ওপর হামলা চালান। তাকে চড় থাপ্পরসহ হেনস্তা করেন।

 

অন্য অফিসাররাও তাকে মারধর করেন। ঘটনার তাৎক্ষনিকতায় হতবাক হয়ে পড়েন উপস্থিত জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং ক্রীড়া সংস্থার লোকজন। এসময় জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান ও পুলিশ সুপার মো: মজিদ আলী নৌ কর্মকর্তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। উপস্থিত আরো কয়েকজন তাদেরকে থামাতে চাইলে তাদের ওপরও ক্ষুব্দ হন নৌ কর্মকর্তারা। এই ঘটনার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে সাঁতারু অন্বেষণের কাজ পন্ড হওয়ার উপক্রম হয়। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ না করে অনেক সাঁতারু চলে যান।


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে সাঁতারু অন্বেষণ কার্যক্রমে আসা নৌবাহিনীর কমান্ডার এস এম মাহমুদুর রহমান প্রতিযোগিতার আয়োজন নিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য জুয়েল চাকমার সাথে তর্কে জড়িয়ে যান। এক পর্যায়ে কমান্ডার জুয়েল চাকমাকে শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করেন। এতে প্রতিযোগিতায় আসা সাঁতারুদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

 

পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান ও পুলিশ সুপার মজিদ আলী অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছান। তাঁরা ঘটনাটি নিয়ে অনেক্ষণ আলাপ আলোচনা করেন। পরবর্তীতে প্রায় তিন ঘন্টার পর অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠান চলার সময় অনেক সাঁতারু চলে যায়। এক পর্যায়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক জুয়েল চাকমাও অনুষ্ঠান স্থল ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে তিনি খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন।

 

খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামলীগের সহ-সভাপতি কংজরী চৌধুরী এবং পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে ক্রীড়ামোদীদের মাঝে তীব্র অসন্তোষ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

 

জুয়েল চাকমা জানান, দিঘীনালা উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক অমল মুৎসুদ্দী গাড়ি ভাড়া ও খেলোয়াড়দের বিষয়ে আলাপ করছিলেন। এ সময় নৌ বাহিনীর কমান্ডার অমল মুৎসুদ্দীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এর প্রতিবাদ করেন জুয়েল চাকমা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কমান্ডার তাঁর ওপর হামলা চালায়। এতে তিনি নাকে ও কপালে আঘাত পান।


নৌ বাহিনীর কমান্ডার এস এম মাহমুদুর রহমান এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য না করে ডিসি ও এসপি’র কাছ থেকে জেনে নেওয়ার অনুরোধ করেন।


এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে যা ঘটেছে তা কারোর কাছে কাম্য নয়। কিছু ভুলবোঝাবুঝি থেকেই এ ঘটনা ঘটেছে।


এদিকে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাবেক সা: সম্পাদক হিসেবে জুয়েল চাকমার ওপর হামলার প্রতিবাদে খাগড়াছড়ি শহরে মিছিল করেছে জেলা ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। তারা ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।

 

হামলায় জড়িত নৌ বাহিনী কর্মকর্তার বিচারের দাবি জানান। এই ঘটনার প্রতিবাদ ও নৌ বাহিনী কর্মকর্তার শাস্তির দাবীতে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন জেলার ক্রীড়া সংগঠক ও ক্রীড়াবিদরা।

 

এদিকে, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী এক বিবৃতিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবী করেছেন।


উল্লেখ্য,সারাদেশের মত খাগড়াছড়িতেও আজ সাতারু অন্বেষণ প্রতিযোগিতা চলছিল। বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশন ও নৌবাহিনী যৌথভাবে এটির আয়োজন করে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত