আগামী বছর ৫টি ভাষায় আদিবাসী শিশু শিক্ষাথীদের মাঝে মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক তুলে দেওয়া হবে

Published: 26 Apr 2016   Tuesday   

মঙ্গলবার রাঙামাটিতে আদিবাসীদের মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের লক্ষ্যে শিক্ষক প্রশিক্ষণ সহায়িকা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

কর্মশালায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ড.মোঃ আব্দুল মামুন বলেন, আগামী বছর ২০১৭ সালের জানুয়ারী মাসের মধ্যে ৫টি ভাষায় আদিবাসী শিশু শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেনী পর্ষন্ত মাতৃভাষায় পাঠ্য পুস্তক তুলে দেওয়া সম্ভব হবে। এরই ধারাবাহিকতায় মাতৃভাষাভিত্তিক বহুভাষিক  শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম নির্দেশিকা এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণ সহায়িকা প্রদান করা হয়েছে।

 

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে রাঙামাটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত দিন ব্যাপী কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটি পার্বত্য  জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের  পরিচালক ডাঃ শামী ইমামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ড.মোঃ আব্দুল মামুন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য স্নেহ কুমার  চাকমা, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহনাজ পারভিন, জেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রেজাউল করিম। স্বাগত বক্তব্য দেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ওয়াসিউর রহমান তন্ময়।

 

কর্মশালার মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও জাতীয় মাল্টিল্যাংগুয়েল কমিটির প্রধান ড.সৌরভ সিকদার। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার রাফেজা শাহীন।

  

কর্মশালায় অংশগ্রহনকারী বিভিন্ন মতামতের ভিত্তিতে সুপরারিশমালা প্রনয়ন করা হয়। দিনব্যাপী কর্মশালায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা,শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।

 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বৃষকেতু চাকমা বলেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তিতে আদিবাসী বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিশুদের মাতৃভাষায় পাঠদানের উল্লেখ রয়েছে। মাতৃভাষায় পাঠদান শুরু করার উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। তবে মাতৃভাষায় পাঠদানের শুরুর আগে স্ব-স্ব মাতৃভাষায় শিক্ষক  নিয়োগ দিতে হবে। এজন্য  পার্বত্য চট্টগ্রাম সংসদীয় কমিটি, পার্বত্য মন্ত্রনালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় থেকে অনুমোদন আসতে হবে।  তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থান  বিশেষে এবং এলাকার পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী বিদ্যালয় নির্মানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন।

 

পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য স্নেহ কুমার চাকমা বলেন,পার্বত্য চুক্তিতে আদিবাসীদের মাতৃভাষায়  শিক্ষা গ্রহনের জন্য স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চুক্তির ১৭-১৮ বছর পরও মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহন চালু না করায় আমাদের সাথে  সরকার প্রতারনা করেছে। তিনি চুক্তি শর্তানুসারে মাতৃভাষায় শিক্ষা ব্যবস্থা অতিদ্রুত চালু পাশাপাশি বিদ্যালয় তৈরীর  যে নীতিমালা রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে পরিবর্তন করা দরকার বলে মন্তব্য করেন।

 

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহনাজ পারভিন বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মাতৃভাষা রক্ষা করতে না পারি তাহলে কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তাদের মাতৃভাষা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।  তিনি বলেন, ২০১০ সালে  জাতীয় শিক্ষানীতিতে বহুভাষিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর কথা রয়েছে। এরই অঙ্গিকার  হিসেবে আগামী বছর ২০১৭ সালের জানুয়ারী মাসের মধ্যে ৫টি ভাষায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিশু শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেনী পর্ষন্ত মাতৃভাষায় পাঠ্য পুস্তক তুলে দেওয়া সম্ভব হবে।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও জাতীয় মাল্টিল্যাংগুয়েল কমিটির প্রধান ড.সৌরভ সিকদার তার উপস্থাপিত প্রবন্ধে বলেন, ২০১০ সালে  জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য সরকারী পর্যায়ে এই শিক্ষাক্রম শুরু করার  ব্যাপারে ইতোমধ্যেই  বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে এবং ৫টি ভাষায় পাঠ্যপুস্তক তৈরী প্রায় সম্পন্ন। তবে বাস্তব ক্ষেত্রে এর সফলতার জন্য বেশ কিছু অন্তরায় চিহিৃত করা যায়। যেমন ভাষায় শিক্ষকের অভাব,শিক্ষককে ভাষায় পাঠদানের জন্য ভিন্ন ভিন্ন  ভাষায় উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদান, একই বিদ্যালয়ে শিক্ষক আছেন কতজন এসব তথ্যও জানা প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, ২০১৪ সালে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষার মাধ্যমে বহুভাষিক শিক্ষা কার্যক্রমের বর্তমান অবস্থা যাচাই এর জন মাঠ পর্যায়ে গবেষনাকর্ম এবং কর্মশালা পরিচাীরত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এই বর্তমান মাতৃভাষা ভিত্তিক বহুভাষিক শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাক্রম নির্দেশিকা এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণ সহায়িকা প্রনযন করা হয়েছে।

 

তার প্রবন্ধের তিনি বলেন, এই প্রশিক্ষণ নির্দেকিার মাধ্যমে শিক্ষকগণ প্রাক-প্রাথমিক শ্রেনির শিশুদের তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষায় পারঙ্গম করে মূলধারার শিক্ষার সাথে কিভাবে সমন্বয় করবেন সেই ধারনা সুস্পষ্টরুপে লাভ করতে পারবেন। সেই সঙ্গে সরকারি উদ্যোগে আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেখানে সকল ভাষার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রধান সহায়িকা হিসেবেও এটি যাতে বিবেচিত হয়  সেভাবেই রচনা ও সংকলন করা হয়েছে। 

 

কর্মশালায় বক্তরা বলেন, পার্বত্যাঞ্চলের আদিবাসী শিশুদেরকে বিদ্যালয়মুখী করার জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণ এ সহায়িকাটি একটি গুরুত্বপূর্ন  ভূমিকা রাখবে। এ প্রশিক্ষণ নির্দেশিকার মাধ্যমে শিক্ষকরা প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণীর শিশুদের তাদের মাতৃভাষায় পারঙ্গম করে মূলধারার শিক্ষার সাথে সমন্বয় করে ধারনা সুস্পষ্টরূপে লাভ করতে পারবেন।  বক্তারা উপস্থাপিত সহায়িকাটি সরকারী নীতিমালাকে অনুসরণ করে করার জন্য পরামর্শ দেন।

 

কর্মশালায় অংশগ্রহনকারীদের মতামতের ভিত্তিতে ৩১টি সুপারিশমালা গ্রহন করা হয়েছে। সেগুলো হল- বিভিভন্ন খেলাধুলা কৌশলেরমাধ্যমে শিশুদের শেখানো,গল্পেরমাধ্যেমে শেখানো,স্বকীয় সাংস্কৃতিক উপকরণ ব্যবহার করা, সামাজিক জীবনধারা ও জীব বৈচিত্র থেকে নেওয়া বিষয়বস্তু থেকে শিক্ষা দেওয়া,বিভিন্ন ধরণের অভিনয়ের মাধ্যমে শেখানো,নি্িবড় তদারকির মাধ্যমে ও নির্ধারিত সময় পর্যালোচনা করা,স্থানীয় কমিউনিটিকে সম্পৃত্ততা করা,অনুপ্রেরণা ও উৎসাহমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করা,নিজস্ব ভাষা ভিক্তিক নিয়োগপ্রাপÍ শিক্ষকেদের নির্ধারন রাখা বা বদলী না করা,শিক্ষক প্রশিক্ষণের ন্যুনতম ৩ মাস মেয়াদ করা,স্ব স্ব ভাষায়বর্ণ মালারচার্ট শ্রেণী কক্ষে সন্নিবেসিত করা,স্থানীয় জনগোষ্ঠি ভিত্তিক খেলাধুলা প্রচলন করা,প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বয়স ৪-৬ করা,ধাপ ভিক্তিক ভাষা ব্যবহারের নিধারণ করা, অভিভাবক সভায় মাদের-কে অগ্রাধিকার দেয়া,শিক্ষক শিশুর কল্পনার সাথে দেয়া মিল থাকা, আনন্দঘন পরিবেশে পাঠদান করা,সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠির শিক্ষক নিয়োগ করা,ব্যায়ামের সুনির্দিষ্ট নিয়মাবলী রাখা,শিশু সুরক্ষা বিষয়ক নিদের্শনা, ব্লকটিচিং সম্পর্কিত জটিলতা,শিশু জড়তা দূরীকরণে সু¯পষ্ট নিদের্শনা,প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার প্রাথমিক ধারণা,প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কিত ধারণা দেয়া, দৈনিক সমাবেশ পরিচালন াকরা,বার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে প্রয়োগ শ্রেণীর রুটিন প্রণয়ন,শ্রেণী কক্ষ সজ্জিত করণের নির্দেশ দেয়া,স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদের মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন,ক্যাচমেন্ট এরিয়াতে জরিপের ম্যধ্যমে প্রাক-প্রাথমিক উপযোগী শিক্ষার্থী/শিশুর ভর্তির নিশ্চিত করা,ঘুম পাড়ানি গল্পের মাধ্যমে শিক্ষা দেয়া,মাল্টিমিডিয়া মাধ্যমে ক্লাশ নেয়ার ব্যবস্থা করা এবং জাতি ভিক্তিক বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পোষাক, অলংকার, হস্তশিল্প ও অন্যান্য বস্তগত সংস্কৃতিক উপারনের ব্যবহার করা।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত