লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বেনামে অভিযোগ দিয়ে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা!

Published: 09 Apr 2016   Saturday   

লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা,সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও হিসাব রক্ষকের নামে একের পর এক বেনামে অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ জাতীয় বেনামে অভিযোগ দেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।


লামা উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে,নব জাতীয়করণসহ লামা উপজেলায় বর্তমানে ৮৩টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। একজন শিক্ষা অফিসার ও ২ জন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যালয়গুলো তদারকি করেন। গত ২০১৪-১৫অর্থ বছরে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত স্লিপের টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে শিক্ষা কর্মকর্তা যতীন্দ্র মোহন মন্ডল এর সাথে কয়েকজন প্রধান শিক্ষকের মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। সে থেকে শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একের পর এক বেনামে অভিযোগ যেতে থাকে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ বিষয়ে কয়েকবার বেনামি অভিযোগের তদন্ত করেছেন।


সূত্র মতে, গত অর্থ বছরে প্রতিটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য ৩০হাজার টাকা হারে বরাদ্দ আসে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে স্লিপের টাকা নির্ধারিত নীতি মালার আলোকে খরচ করার নির্দেশনা রয়েছে। উপজেলায় শিক্ষকদের মাসিক সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে নীতিমালাকে লঙ্ঘন করে প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন খরচের নাম দিয়ে কয়েকজন প্রধান শিক্ষক টাকা আদায় করেছেন। যে সকল শিক্ষক টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন তাদেরকে বদলিসহ বিভিন্ন হয়রানির হুমকি দেয়া হয়। তাছাড়া গত অর্থ বছরে প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়নের জন্য সরকারী বরাদ্দের অর্থ যথাযত ভাবে ব্যবহার না করার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা শিক্ষা  কর্মকর্তার ও স্লিপের টাকা হতে টাকা আদায়কারী প্রধান শিক্ষকের সাথে আদায়কৃত টাকার ভাগাভাগি নিয়ে মতবিরোধের সূত্রপাত হয়।

 

তবে, গত বছরের স্লিপের বরাদ্দের অনিয়মের ব্যপারে উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় ও উপজেলা শিক্ষা সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভায় একাধিকবার আলাচনা হয়েছে। একটি তদন্তে শিক্ষকদের কাছ থেকে স্লিপের টাকার বরাদ্দ হতে টাকা আদায়ের বিষয়টি প্রমানিত হয়েছে। উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের গত বছরের স্লিপের বিষয়ে তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বর্তমান অর্থ বছরে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিকের জন্য ৫হাজার টাকা করে বরাদ্দ এসেছে। প্রাক-প্রাথমিকের জন্য বরাদ্দকৃত টাকার উপকরণ ক্রয় করার পর তদন্ত পূর্বক অর্থ ছাড় করার জন্য শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সরজমিন পরিদর্শনে ফাইতং নয়াপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অধিকাংশ বিদ্যালয় গত বছরের স্লিপের অর্থ দিয়ে কাজ সমাপ্ত করেনি মর্মে জানাগেছে।

 

এদিকে, লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। কয়েকজন শিক্ষকের বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় থেকে চিঠি লেখার পরও জেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। যার কারণে শৃংখলা ভঙ্গকারী শিক্ষকরা সাহস পাচ্ছেন।

 

মেরাখোলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি নুরুল হুদা চৌধুরী জানান, বিশেষ মহল বেনামে পত্র দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগকে হেয় করার চেষ্টায় আমরা নিন্দা জানাচ্ছি।

 

লামা উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আশিষ কুমার মহাজন ও আক্তার উদ্দিন জানিয়েছেন, সরকারের নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে কার্যক্রম পরিচালনা না করায় কয়েকজন প্রধান শিক্ষক একর পর এক বেনামে উড়ো পত্র দিয়ে শিক্ষা অফিসে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। একই সাথে লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হয়রানি এবং জিম্মি করে নিজেদের চাকুরী শৃঙ্খলা বিরোধী কৃতকর্ম ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।


উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা যতীন্দ্র মোহন মন্ডল জানিয়েছেন, রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে কয়েকজন প্রধান শিক্ষক লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছেন। তারা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক দায়িত্ব পালনে বাঁধা সৃষ্টি করছেন। কয়েকজন প্রধান শিক্ষক রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকে প্রকাশ্যে ঘোরা ফেরা করে থাকেন।

 

এ বিষয়ে লামার সর্বমহল জ্ঞাত রয়েছেন। আবার উপজেলা শিক্ষা অফিসকে রাজনৈতিক ভয় দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। যার কারণে লামা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বিভাগীয় কার্যক্রম বাস্তবায়নে আধিপত্য বিস্তার চেষ্টা কারীদের দ্বারা বাধা গ্রস্থ হচ্ছে। অন্যদিকে শিক্ষা প্রশাসন ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।


বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আব্দুল কাদের-এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।


লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খালেদ মাহমুদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সরকারী চাকুরীজীবি হয়ে রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকা বিষয়ে কোনভাবেই বরদাশত্ করা যাবে না।
--হিলববিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত