নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যূৎ সরবরাহ দিতে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে পৃথক দুটি বিদ্যুৎ গ্রিড সঞ্চালন উপকেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে

Published: 18 Feb 2016   Thursday   

নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যূৎ সরবরাহ দিতে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় পৃথক দুটি ১৩২/৩৩ কেভি শক্তির বিদ্যুৎ গ্রিড সঞ্চালন উপকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে রাঙামাটির সাপছড়িস্থ শুকরছড়িতে এবং খাগড়াছড়িতে বিদ্যুৎ গ্রিড সঞ্চালন উপকেন্দ্র স্থাপনের জমি অধিগ্রহনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।


একাধিক সূত্রে জানা গেছে রাঙামাটি আসনের নির্বাচিত সাংসদ ঊষাতন তালুকদারের দাবি ও প্রচেষ্টার ভিত্তিতে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে মন্ত্রণালয়সহ বিদ্যুৎ বিভাগকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আগে বিদ্যুৎবিহীন থাকা রাঙামাটির বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি ও বরকল উপজেলায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন দিয়ে ওই তিনটি উপজেলাবাসীকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় নিয়ে এসেছে সরকার। এছাড়া রাঙামাটি শহর এলাকায় ৫মেগাওয়াট থেকে বাড়িয়ে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া হচ্ছে বর্তমানে।


সূত্র জানায়,এলাকাবাসীর চাহিদা মতো নিরবচ্ছিন্নভাবে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং সদর উপজেলার বিদ্যুৎবিহীন ছয়টি ইউনিয়ন বন্দুকভাঙ্গা, বালুখালী, মগবান, জীবতলী, কুতুকছড়ি ও সাপছড়ির প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে রাঙামাটি সদরের সাপছড়ি ইউনিয়নের শুকরছড়ি এলাকায় একটি ১৩২/৩৩ কেভি শক্তির বিদ্যুৎ গ্রিড সঞ্চালন উপকেন্দ্র স্থাপন করছে সরকার। এ জন্য স্থানীয় মালিকদের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। এটি নির্মিত হলে শহরসহ আশেপাশের এলাকায় চাহিদা মতো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হবে বলে জানিয়েছে সরকারের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও খাগড়াছড়ি জেলা সদরে একই শক্তির বিদ্যুৎ গ্রিড সঞ্চালন উপকেন্দ্র স্থাপন শুরু করা হচ্ছে।


সূত্র মতে, রাঙামাটি সদরের সাপছড়ির শুকরছড়িতে ১৩২/৩৩ কেভি বিদ্যুৎ গ্রিড সঞ্চালন উপকেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ খুব শিগগিরই শুরু হবে। ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণ ও পরিমাপ শেষে ঠিকাদারি কর্তৃপক্ষকে জমিসহ কাজ বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। মোট ৫ দশমিক ৩৫ একর জায়গার মালিকদের পক্ষে স্থানীয় মধ্যস্থতাকারী বিশিষ্ট ব্যক্তি মনিন্দ্র চাকমার সহায়তায় অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ মূল্য বাবদ ৬ কোটি ৬১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা স্ব-স্ব জমির মালিকদের কাছে পরিশোধ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি।


এদিকে, সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে সাপছড়িস্থ শুকছড়ি এলাকায় বিদ্যুৎ গ্রিড সঞ্চালন উপকেন্দ্র স্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহন করে জমিতে পিলার স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি পিলালের পাশে বাঁশ দিয়ে লাল কাপড়ের পতাকা উড়িয়ে চিহৃ দেয়া হয়েছে। তবে ঠিকাদারি কর্তৃপক্ষ এখনো কাজ শুরু করার কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি।


জমির মালিক স্নেহ কুমার চাকমা জানান, তার ৩৫ শতক জমির ক্ষতিপূরণের মূল্য বাবদ সব পাওনা বুঝে পেয়েছেন। একই সঙ্গে অন্যরাও সবাই নিজেদের ক্ষতিপূরণের সম্পূর্ণ টাকা পেয়েছেন।


জমির মধ্যস্থতাকারী মালিক মনিন্দ্র চাকমা বলেন, অধিগ্রহণ করা জমির যাবতীয় কাগজপত্র সম্পাদনের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের সব টাকা মালিকদেরকে পরিশোধ করেছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি। একই সঙ্গে সরকারের কাছে জমি হস্তান্তর করেছেন মালিকরা। তারা হলেন অলিঙ্গ চাকমা, কলিঙ্গ চাকমা, বুজ্যে চাকমা, বিজিমোয়া চাকমা, ভরত কুমার চাকমা, স্নেহ কুমার চাকমা, নীল মনি চাকমা,দয়ামনি চাকমা ও সোমা চাকমা।


নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির প্রকৌশলী ধর্মদর্শী বড়ুয়া বলেন, খুব শিগগিরই এ বিদ্যুৎ সঞ্চালন উপকেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষে জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজও বুঝিয়ে দিয়েছে সরকার।


তিনি আরও বলেন, সারা দেশে মোট দশটি বিদ্যুৎ গ্রিড সঞ্চালন উপকেন্দ্র স্থাপন করছে সরকার। সেগুলোর মধ্যে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় একটি করে দুইটি উপকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। এ দুটি বিদ্যুৎ গ্রিড সঞ্চালন উপকেন্দ্র নির্মিত হলে শহরাঞ্চলসহ পার্বত্য এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হবে। এতে এ এলাকায় বিদ্যুতের আর কোনো সমস্যা থাকবে না।


জমি অধিগ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসনের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তানভীর আহমেদ বলেন, শুকরছড়িতে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ সঞ্চালন উপকেন্দ্রটির জমি অধিগ্রহণ এরমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষকে জমিও বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। জমির পরিমাণ প্রায় সাড়ে পাাঁচ একর- যার মূল্য বাবদ প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা মালিকদের পরিশোধ করা হয়েছে।


উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে খরস্রোতা কর্ণফুলি নদীর ওপর দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে দেশের প্রধান জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন লাখের অধিক পরিবারের লোকজন। পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় ৫৪ হাজার একর চাষযোগ্য জমি।

 

কিন্তু স্থানীয় লোকজনকে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়ার কথা বলা হলেও সরকারি মূল্যে বিল পরিশোধেও আজ পর্যন্ত বিদ্যুতের সুবিধা পায়নি জেলার অধিকাংশ লোকজন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত