আলীকদমে একটি সিন্ডিকেট অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও বনাঞ্চল উজাড়ের অভিযোগ

Published: 22 Jan 2016   Friday   

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের রেপারপাড়ি বাজারের পশ্চিমপাশে ডপ্রুপাড়ার আশপাশ থেকে অবৈধভাবে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট পাথর উত্তোলন ও ব্যাপক বনাঞ্চল উজাড় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা করছেন পরিবেশবাদীরা।

 

এদিকে,  পাথর আহরণ ও পরিবহন করে থাকে তা হলে তা সর্ম্পূন্ন অবৈধ উল্লেখ করে আইন অমান্যকারীদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেয়া হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

 

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আলীকদমের চৈক্ষ্যং রেপারপাড়া বাজার থেকে মসজিদের পাশ দিয়ে আধা কিলোমিটার পর থেকে পশ্চিমদিকে ডপ্রুপাড়া, হরিণঝিরির আগা ও পাইকঝিরি পর্যন্ত অবৈধ পাথর উত্তোলন ও বনাঞ্চল উজাড়ে শতাধিক পাহাড় কেটে প্রায় ৩কিলোমিটার রাস্তা করেছে ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫টি ট্রাক, ৮ থেকে ১০টি পিকআপ এই পথদিয়ে শতাধিকবার পাথর, লাকড়ি ও গাছ বহন করে নিয়ে যায়। অতিমাত্রায় পরিবহনের কারণে সরকারী ব্যয়ে নির্মিত রাস্তা ও কালভাট গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

 

ডপ্রু পাড়ার কারবারী হ্লাথোয়াই  ম্রো ও স্থানীয় ছাচিং ম্রো জানান, ডপ্রু পাড়া, হরিণঝিরি ও পাইকঝিরির সহজ সরল ম্রো জনগোষ্ঠীকে উপেক্ষা করে তাদের নিজস্ব ও দখলীয় জায়গা থেকে গাছ, বাশঁ ও পাথর আহরণ করছে মাংথাই হেডম্যান পাড়া সরকারী বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিনহাজ উদ্দিন রুকন মাষ্টার ও বনফুল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশীষ কুমার দত্ত। কোন প্রকার মূল্য পরিশোধ না করে তাদের দখলীয় ও রক্ষণাবেক্ষণ করা বাগান কেটে নিয়ে যাচ্ছে।

 

তিনি অভিযোগ করে অারও জানান, সংশ্লিষ্ট বিভাগের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সহায়তায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিমাত্রায় পাহাড় কেটে ও মাটি খুঁড়ে পাথর আহরণ করায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি অত্র অঞ্চলে মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।

 

ঝিরি ও পাহাড় খূঁড়ে পাথর উত্তোলনের ফলে এলাকায় দেখা দিয়েছে চরম পানির অভাব। শুষ্ক মৌসুম আসতেই নলকুপ ও রিংওয়েলে পানি উঠা বন্ধ হয়ে যায়। পাথর পাচার ও বন উজাড় দেখেও প্রশাসন না দেখার ভান করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

 

পাথর আহরণ ও গাছ, লাকড়ি পরিবহনের কথা সত্যতা স্বীকার করে স্কুল শিক্ষক মিনহাজ উদ্দিন রুকন মাষ্টার জানান,  উক্ত জায়গা সাঙ্গু মৌজার হেডম্যান থংপ্রে ম্রো থেকে চুক্তি ভিত্তিক লিজ  নেয়া হয়েছে।  জায়গা ও বাগান মালিককে টাকা দিয়ে গাছ, লাকড়ি ও পাথর আহরণ করা হচ্ছে। 

 

সাঙ্গু মৌজার হেডম্যান থংপ্রে ম্রো জানান,তিনি হরিণঝিরি ও পাইকঝিরির কোন জায়গা কাউকে গাছ ও পাথর আহরণের জন্য লিজ দেননি। রুকন মাষ্টার তাকে বলেছেন ডপ্রু পাড়ার লোকজন থেকে লিজ নিয়েছে আর ডপ্রু পাড়াবাসিকে তার কথা বলছে। মূলত তারা মিথ্যাচার করছে তার দাবী। 

 

তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, ডপ্রু পাড়ার আশপাশের জায়গা বন বিভাগের রিজার্ভ এলাকা। বন বিভাগের জায়গা থেকে গাছ, লাকড়ি ও পাথর আহরণ করলেও তারা কেন কিছু বলছে না।

 

এ ব্যাপারে লামা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চেীধুরী বলেন, পাথরের পারমিট অনুমতি দেন জেলা প্রশাসক। তাদেরকে কোন অনুলিপি দেয়া হয় না। যার কারনে কোথায় পারমিট ইস্যু হল তা  তিনি জানেন না।

 

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আর বলেন, পাহাড় খূঁড়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ না হলে অচিরেই এ এলাকা পরিবেশ বিপর্যয়ের মূখে পড়বে। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া কোন প্রকার গাছের গাড়ি যেতে পারবে না।

 

আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আল আমিন বলেন, বান্দরবান জেলা প্রশাসন থেকে বর্তমানে কোন পাথরের পারমিট দেয়া হয়নি। যে সব পারমিট ব্যবসায়ীদের কাছে রয়েছে তার কোনটারী মেয়াদ নেই। কেউ যদি পাথর আহরণ ও পরিবহন করে থাকে তা হলে তা সর্ম্পূন্ন অবৈধ।

 

তাছাড়া পাহাড় খুঁড়ে পাথর আহরণের কোন অনুমতি কখনও দেয়া হয়নি। কেউ যদি তা করে থাকে তাদের কে আইনের আওতায় আনার জন্য  নির্দেশ দেয়া হয়েছে জানান তিনি। 

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত