আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও আদিবাসী দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপনের জোরালো দাবী

Published: 09 Aug 2015   Sunday   

আজ (শনিবার)  আর্ন্তজাতিক আদিবাসী দিবস। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম র‌্যালী, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহন করেছে। এবারের জাতিসংঘের ঘোষিত আদিবাসী দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে “২০১৫-উত্তর এজেন্ডাঃ আদিবাসী জাতিসমূহের জীবনধারা উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ”।

এদিকে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি উদযাপনের জোরালোভাবে দাবি জানিয়েছেন আদিবাসী নেতারা।

জানা যায়, আদিবাসীদের দীর্ঘ দিনের সংগ্রাম ও যোগাযোগের প্রেক্ষাপটে ১৯৯৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারন পরিষদ প্রতিবছর ৯ আগস্টকে আর্ন্তজাতিক আদিবাসী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী আদিবাসী বিষয়টি জোরালোভাবে মনোযোগ আকর্ষনের প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকৃতি দিয়ে এবং মানবধিকার, পরিবেশ, উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি ও সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ ইত্যাদির ক্ষেত্রে আদিবাসী জনগনের সমস্যা সমাধানের জন্য আর্ন্তজাতিক সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে প্রথমে ১৯৯৫-২০০৪ খ্রিঃ সময়কে প্রথম আর্ন্তজাতিক আদিবাসী দশক ঘোষনা করে। পরবর্তীতে ২০০৫-১৪ সালের সময়কে দ্বিতীয় আর্ন্তজাতিক আদিবাসী দশক হিসেবে ঘোষনা করে জাতিসংঘ। এছাড়া জাতিসংঘ ২০০০ সালে আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরাম গঠন করে। ২০০১ সাল থেকে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপেটিয়র নিয়োগ এবং ২০০৭ সালে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক ঘোষনাপত্র গ্রহন করা হয়।

বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে আইএলও’র আদিবাসী ও ট্রাইবাল জনগোষ্ঠী কনভেনশন নং ১০৭ অনুস্বাক্ষর করলেও উক্ত কনভেনশনে স্বীকৃত আদিবাসীদের প্রথাগত ভূমি অধিকার তথা ভূমির উপর ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত অধিকার, মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ লাভ, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি, সিদ্ধান্ত-নির্ধারণী ভূমিকা নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি অধিকার বাস্তবায়নে সরকার এগিয়ে আসেনি। উপরন্তু সরকার ২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীতে আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে পরিচিতির স্বীকৃতি লাভের দাবিকে উপেক্ষা করে ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ পরিচয়ে অখ্যায়িত করে। এতে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠী তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বিরোধিতা করে।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল শাখা থেকে প্রকাশতি এক লিফলেটে  দাবী করা হয়েছে,পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের ৫৪টি অধিক আদিবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে। যার সংখ্যা ৩০ লাখ। এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৪টি আদিবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে, যার জনসংখ্যা হচ্ছে ৮ লাখ। তাদের রয়েছে স্বকীয় স্বতন্ত্র ভাষা, সংস্কৃতি,ইতিহাস,ঐতিহ্য, কৃষ্টি. পোশাক, খাদ্যাভাস, জীবনধারা, রীতি-রেওয়াজ ও ধর্ম। এছাড়া দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য,সংস্কৃতি, রাজনীতি তথা সভ্যতা বিনির্মাণে আদিবাসী জাতিসত্বাদের অপরসীম অবদান এবং দেশের ভূখন্ডের বিভিন্ন অঞ্চলের আদিম বাসিন্দা হওয়ার সত্বেও এদেশে এখনও চরম অবহেলা, বঞ্চনা ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। স্বাধীনতার চার দশক পরও দেশের সংবিধানে আদিবাসী জাতিসত্বাদের আত্নপরিচয় ও তাদের নায্য অধিকারের যথাযথ স্বীকৃতি মিলেনি। তাছাড়া আদিবাসীদের বিষয় নিয়ে রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারকদের মধ্যে গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যহীন দৃষ্টিভঙ্গি বিকশিত হতে পারেনি। যার কারণে আদিবাসীরা জাতিগত আগ্রাসন, ভূমি বেদখল, সাম্প্রদায়িক হামলা, অনুপ্রবেশ, হত্যা, ধর্ষন শ্লীলতাহানি, লুটপাট, হুমকীসহ নানান ক্ষেত্রে অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে।

এতে আরও বলা হয়,দীর্ঘ দুদশক ধরে চলা সশস্ত্র সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ও উন্নয়নে এবং সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামকে জুম্ম অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকার করে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর করে। কিন্তু চুক্তির ১৮ বছর অতিক্রান্ত হলেও পার্বত্য চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো এখনও অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়ে গেছে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে সম্পূর্নরুপে অচলাবস্থায় রেখে সরকার একের পর এক চুক্তিবিরাধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম গ্রহন ও বাস্তবায়ন করে চলেছে। পার্বত্য চুক্তি ও আইন মোতাবেক জুম্ম জনগোষ্ঠীর ভূমি অধিকার নিশ্চিত না করে বিজিবি ক্যাম্প স্থাপন, পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন, রিজার্ভ ফরেষ্ট ঘোষনা, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা হর্টিকালচার ও রাবার চাষের নামে ইজারা প্রদান করে জুম্মদের সামাজিক মালিকানাধীন হাজার হাজার একর জুম ভূমি ও মৌজা ভূমি জবরদখল করা হচ্ছে। অপরদিকে পার্বত্যবাসীর প্রবল বিরোধিতার সত্বেও জনমতকে পদদলিত করে উন্নয়ন নামে পুলিশ ও সেনা বাহিনী দিয়ে সরকার মেডিকেল কলেজ প্রকল্প এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান সমস্যা ভূমি। এ ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষে চলতি বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১-এর বিরোধাত্মক ধারা ১৩ দফা সংশোধনী প্রস্তাবারে আইনটি সংশোধনেরও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জাতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশন এবং অতি সম্প্রতি বাজেট অধিবেশন শেষ হয়ে গেলেও উক্ত আইনটি এখনো সংশোধিত হয়নি।

এদিকে, আদিবাসীদের জাতিসমুহের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি উদযপানের দাবী জানিয়েছেন আদিবাসীরা নেতারা। আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি না দেয়ায় আদিবাসীরা মানবাধিকার লংঘনের ঘটনার বিচারসহ মৌলিক অধিকার থেকে বরাবরই বঞ্চিত ও অবহেলিত রয়েছে বলে দাবী আদিবাসী নেতাদের।

অার্ন্তজাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার ঢাকায় হোটেল সুন্দরবনে আয়োজিত এক সংবাদ সন্মেলনে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা(সন্তু লারমা) সংবিধান সংশোধন করে আদিবাসীদের স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন। সাংবিধানিক স্বীকৃতি না থাকায় আদিবাসীদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা,ভূমি জবরদখল ও উচ্ছেদ, আদিবাসী নারীর উপর ধর্ষণ, হত্যা, অপহরণসহ নৃশংস সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তিনি দাবী করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর ১৮ বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলোর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম (উপজাতীয়) অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ,পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের আওতাধীন বিষয় ও কার্যাবলী কার্যকরকরণ এবং জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিতকরণ, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিকরণসহ ইত্যাদি বিষয়গুলো বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান এখনো কাক্সিক্ষত পর্যায়ে অগ্রগতি লাভ করেনি। তিনি আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে ফারাক বা ব্যবধান রয়েছে তা কমিয়ে আনতে আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের প্রস্তাবিত“বাংলাদেশ আদিবাসী অধিকার আইন” জাতীয় সংসদে পাশেরও দাবি জানান। পাশাপাশি তিনি আদিবাসী ইস্যুতে জনসচেতনতা তৈরিতে সরকার,জাতিসংঘ, নাগরিক সমাজ ও গণ-মাধ্যমের বিশেষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।

চাকমা রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় রাষ্ট্রীয়ভাবে আদিবাসী দিবসটি পালন করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, সরকারের তরফ থেকে কিছু বিভ্রান্তি ও ভুল বোঝাবুঝির কারণে আদিবাসীদের স্বীকৃতি মিলছে না। কারন সরকার মনে করছে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হলে সরকার বা রাষ্ট্রের উপর এমন কিছু দায়িত্ব বর্তাবে সেটা সহনীয় হবে না। অথবা সরকার বা রাষ্ট্র সেই দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। এটা একটি অমুলক ধারনা। ফলে আদিবাসী জনগোষ্ঠীরা যেভাবে পরিচিতি হতে চাইছে তার স্বীকৃতি না দেয়াতে রাষ্ট্রের সাথে দুরত্ব বেড়ে যাচ্ছে। এ দুরত্ব বেড়ে গেলে অবশ্যই সেটা অসন্তোষ সৃষ্টি হবে এবং সংঘাত চলে আসবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় কোন কার্যক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আর্ন্তজাতিক আইনে জাতিসংঘ কর্তৃক ২০০৭ সালে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক ঘোষনাপত্রে যাদের বাংলাদেশের আদিবাসী বলছে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ীসহ সকলকেই ইংরেজীতে ইন্ডিজিনাস এবং বাংলায় অদিবাসী শব্দ দ্বারা অভিহিত করা হচ্ছে। এমন একটি সময় ছিল কেবল ইন্ডিজিনাস বা আদিবাসী বলতে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া,নিউজিল্যান্ড ইত্যাদি এলাকাকে বুঝাতো। অন্যদিকে বাংলায় উপজাতী ইংরেজীতে ট্রাইবেল (যা আমরা অনেকে পছন্দ করি না) সেগুলো বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে এশিয়া বা অফ্রিকা অঞ্চলে বর্তাতো। জাতিসংঘ এখন আর সেই বিভাজন করছে না যে এরা আদিবাসী, এরা উপজাতী। সকলকেই আদিবাসী বলছে। তবে এখন বিভিন্ন রাষ্ট্র যে অবস্থানে নিক না কেন আর্ন্তজাতিকভাবে এ বিষয়টি আর বিতর্কিত না। সেটা গৃহীত হয়েছে যে ইংরেজীতে ইন্ডিজিনাস নামধারী মানুষকে বলা যাবে। তার মতে, সাংবিধানে, আর্ন্তজাতিক আইনের যেগুলোতে বাংলাদেশ সরকার চুক্তিতে অনুমোদন করেছে,পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে যে সব অধিকারের কথা বলা হয়েছে তাতে এসব জনগোষ্ঠীদের পরামর্শ ও সম্মতি নিয়ে প্রেক্ষাপট অনুসারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করা। এতে রাষ্ট্রের ও আদিবাসী জনগনের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার বিভাগের সহ-সম্পাদক সজীব চাকমা বলেন, ২০০৭ সালে জাতিসংঘের আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক ঘোষনাপত্র ও রাষ্ট্রীয়ভাবে আদিবাসী দিবসটি পালনের পাশাপাশি পার্বত্য চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের দাবী জানিয়ে আসছি।

আদিবাসী ফোরামের পার্বত্য অঞ্চল শাখার সদস্য সচিব ইন্টু মনি তালুকদার বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন নামে অখ্যায়িত করে আদিবাসীদের আত্নপরিচয়কে অস্বীকার করা হচ্ছে। আদিবাসীদের সাংবিধানিকভাবে অস্বীকৃতি করা হচ্ছে। যার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সমতলে আদিবাসীদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা,ভূমি জবরদখল ও উচ্ছেদ, আদিবাসী নারীর উপর ধর্ষণ, হত্যা, অপহরণসহ নৃশংস সহিংসতা ঘটনা ঘটছে।

রাঙামাটিতে কর্মসূচিঃ
২০১৫-উত্তর এজেন্ডাঃ আদিবাসী জাতিসমূহের জীবনধারা উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ এবং পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নসহ আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান-এ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্যাঞ্চল শাখার উদ্যোগে সকাল ৯টায় পৌর সভা চত্বরে অনুষ্ঠানের উদ্ধোধন করবেন জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের অন্যতম সদস্য ও চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ২৯৯নং আসনের নির্বাচিত সাংসদ উষাতন তালুকদার। আলোচনা সভা শেষেপৌর চত্বর থেকে জেলা শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গন পর্ষন্ত একটি বর্ন্যা র‌্যালী বের করা হবে। এছাড়া খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্যাঞ্চল শাখার উদ্যোগে এ দিবসটি পালিত হবে জানা গেছে।

ঢাকায় কর্মসূচিঃ
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম কেন্দ্রীয় উদ্যোগে শহীদ মিনারে সকাল ১০টায় সামাবেশ, র‌্যালী ও সংস্কৃতি অন্ঠুানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে অনুষ্ঠানের উদ্ধোধন করবেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান। প্রধান অতিথি থাকবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা(সন্তু লারমা)। অনুষ্ঠানে আদিবাসী নেতবৃন্দ উপস্থিতি ছাড়াও জাতিসংঘ আবাসিক প্রতিনিধি, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতসহ বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ উপস্থিত থেকে সংহতি জানানোর কথা রয়েছে।

এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান রাজশাহী, দিনাজপুর, নাটোর, ঠাকুরগাঁও, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, নেত্রকোনা, সিলেট, মৌলভীবাজার, শেরপুর, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, কক্সবাজার, সাতক্ষীরা, মাগুরা, সুনামগঞ্জ প্রভৃতি স্থানে আদিবাসী দিবস উদযাপন করা হবে বলে আদিবাসী ফোরাম সূত্রে জানা গেছে।

                                       জাতিসংঘ মহাসচিবের বাণী 
আদিবাসী দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বাণী দিয়েছেন। তিনি তার বাণীতে বলেন, এ বছর জাতিসংঘ ৭০তম বর্ষপূর্তি পালন করছে, আমরা মানবতার গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির দিকে তাকিয়ে দেখতে পারি। ২০০৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্র গৃহীতকরণ হচ্ছে আদিবাসী জাতিসমূহ ও জাতিসংঘের সদস্য-রাষ্ট্রের মধ্যকার ফলপ্রসূ অংশীদারিত্বের মাধ্যমে অর্জিত অনেকগুলো সফলতার মধ্যে অন্যতম একটি সফলতা।

তিনি এ বছরটি মানবিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও একটি সন্ধিক্ষণ হিসেবে গুরুত্ব বহন করে উল্লেখ করে বলেছেন সহস্রাদ্ধ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সময় সমাপ্তির দিকে এগুচ্ছে এবং ইহার উত্তরসুরী হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশীদারমূলক সমৃদ্ধির ধারা অগ্রসর করার লক্ষে প্রণীত ২০১৫-উত্তর উন্নয়ন এজেন্ডা। জনমানুষের এই এজেন্ডা হচ্ছে সকল ক্ষেত্রে, চিরতরে, প্রত্যেক অঞ্চল থেকে এবং কাউকে পেছনে না রেখে দারিদ্র বিমোচনের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট মূর্ত কর্মপরিকল্পনা।

তিনি আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে, আমরা বিশ্বের আদিবাসী জাতিসমূহের স্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধির উপর দৃষ্টি আর্কষণে গুরুত্বারোপ করছি। আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্রে আদিবাসী স্বাস্থ্যসেবা প্রথা সমুন্নত রাখা তথা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সর্বোচ্চ সেবামান উপভোগের জন্য সকল সামাজিক ও স্বাস্থ্যসেবা লাভের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা ঘোষণাপত্রে স্বীকৃতি আদিবাসী জাতিসমূহের অধিকার ও আশা-আকাক্সক্ষাকে সহায়তা প্রদানের জন্য ঐকান্তিক প্রয়াস চালিয়ে যাবো। ২০১৫-উত্তর উন্নয়ন এজেন্ডার অংশ হিসেবে আদিবাসীদের সমৃদ্ধির জন্য তাদের চিন্তা-ধারণা ও আশা-আকাক্সক্ষাকে পরিপূরণ করে এমন সাংস্কৃতিকভাবে উপযুক্ত উপায়ে এসব বিষয়গুলো অবশ্যই জরুরী ভিত্তিতে মোকাবেলা করতে হবে।

তিনি বিশ্ব আদিবাসী জাতিসমূহের এই আন্তর্জাতিক দিবসে, আদিবাসী জাতিসমূহকে যেন পেছনে ফেলে না রাখা হয় তা নিশ্চিত করতে আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান। একটি উন্নততর, অধিকতর ন্যায্য ভবিষ্যত গড়ে তুলতে আদিবাসী জাতিসমূহের স্বাস্থ্যসেবা ও সমৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণে অধিকতর প্রয়াস চালাতে অঙ্গীকারাবদ্ধ হই।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত