ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ী ঢলে বান্দরবানে আবারও সারাদেশের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। টানা বৃষ্টিপাতের কারণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়াসহ রুমা-থানছির প্রধান সড়ক সুয়ালকের ব্রীজটি পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
জানা গেছে, টানা বর্ষনের কারণে বান্দরবান-সাতকানিয়ার বাজালিয়ার কয়েকটি স্থানে পাহাড়ী ঢলে প্রধান সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় সারাদেশের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে সারাদেশের সঙ্গে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়কের দু’পাশে আটকা পড়েছে শতশত যানবাহন।
এদিকে মঙ্গলবার বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্র থেকে মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করে। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে আবারও ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় সাঙ্গু নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলা শহরের নিম্নাঞ্চল আবারও প্লাবিত হয়েছে। এনিয়ে একমাসে বান্দরবানে বন্যার পানিতে তৃতীয় বারের মত নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার কারণে নলকূপ, রিং ওয়েলসহ পানির উৎস বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ থেকে পাহাড় ধসের ঝুকিতে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং অব্যাহত রেখেছে।
পৌর মেয়র মোহাম্মদ জাবেদ রেজা জানান, টানা বৃষ্টিপাতে তৃতীয়বারের মত বন্যায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের দূর্ভোগ বেড়েছে বহুগুনে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে বন্যা দূর্গতদের মাঝে খাদ্য সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। শনিববার থেকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হবে।
টানা বৃষ্পিাতের কারণে রুমা-থানছির প্রধান সড়ক সুয়ালকের ব্রীজটি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। রুমা ও থানছি উপজেলার প্রধান সড়কের বসন্ত পাড়া, নয় মাইল নামক স্থানে প্রায় চার কিলোমিটার সড়কে মাটি ধসে পড়েছে। অনেক স্থানে পাহাড় ধসে গিয়ে পুরো সড়ই বিলীন হয়ে গেছে। দেখে বোঝার উপায় নেই এসব স্থানে সড়ক ছিল। এছাড়া জীবন নগর, কাটা পাহাড়, বলিপাড়া, বাগানপাড়াসহ বেশ কিছু স্থানেও ব্যাপক পাহাড় ও সড়ক ধসে পড়েছে। এতে নয় দিন ধরে ওই দুই উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পাহাড় ধসের কারণে রোয়াংছড়ি উপজেলার সাথে জেলা শহরের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় দুই উপজেলায় লাগামহীনভাবে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। সকল ধরণের যানচলাচল বন্ধ থাকায় কাঁচাজাতীয় মালামাল বাজারজাতের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জুমের কাঁচা মালামাল।
জেলার সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আজিজুল মোস্তফা জানান, পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া ব্রীজের উপরে একটি বেইলী ব্রীজ স্থাপনের কাজ করা হচ্ছে। বেইলী ব্রিজটি স্থাপন করা শেষে পুনরায় সড়ক যোগাযোগ সচল করা হবে।
অন্যদিকে. পাহাড় ধসে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় অন্যমত পর্যটন স্পট বগালেক, কেউক্রাডং, তাজিংডং, রিঝুক ঝর্ণা, চিম্বুক-নীলগিরি, নাফাকুমের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে যেতে পারছেন না পর্যটকরা। অনেক পর্যটক হোটেলের আসলেও রুম বাতিল করে ফিরে গেছেন এবং অগ্রিম বুকড করা রুম বাতিল করছেন। এতে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছে হোটেল ব্যাবসায় সাথে জড়ি সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, রুমা ও থানছি উপজেলার শতশত মানুষ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাধ্য হয়ে ৩৫ থেকে ৪০মাইল পায়ে হেঁটে জেলা শহর ও হাঁটবাজারে যাতায়াত করেছে। কিন্তু উক্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে আবারও ব্যাপক পাহাড় ধস দেখা দেয়া লোকজনের চলাচল বন্ধ করে দিয়ে সেনা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনীর প্রকৌশল শাখা ১৯ ইসিবি”র টুআইসি মেজর সাদেক মাহামুদ জানান,ভারী বৃষ্টিপাতে রুমা-থানছি উপজেলার ধসে পড়া প্রধান সড়কটি খুব দ্রুত চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, চকরিয়া লামা প্রধান সড়কের মিরিঞ্জা এলাকায় সড়ক ভেঙে যাওয়ায় লামা-আলীকদম উপজেলায়ও যানচলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রবল বাতাসে বান্দরবানের রুমা, থানছি আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দুই শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে।
জেলা পরিষদের সদস্য জুয়েল বম জানান, ঘূর্ণিঝড় কোমেনের আঘাতে রুমা উপজেলার কেউক্রাডং পাহাড়ের বগালেক পাড়া, বাসলাং পাড়া, আর্থা পাড়া, মুলপি পাড়াসহ ১০টিরও বেশি পাড়ার বসতঘর তীব্র বাতাসে ভেঙ্গে গেছে। উঁচু পাহাড় চুড়ায় বসতি থাকায় ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
নাই্ক্ষ্যংছড়ি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু শাফায়েত জানান, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুনধুম তুমব্রু, সোনাইছড়ি এলাকায় ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ছয়টি আশ্রয় কেন্দ্রে লোকজনদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহের খুটি উপড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে এসব এলাকায়।
এদিকে শুক্রবার রাতে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সম্মানিত সদস্য এবং আলীকদম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক জনাব থোয়াইচাহ্লা বর্ষাব্রত পালন উপলক্ষে ধর্মীয় আচারাদি পালনকালে বৌদ্ধ বিহারের কাছে ঝড়ো হাওয়ায় একটি গাছ উপড়ে পড়ে মারাত্মকভাবে আহত হন। তাকে আশংকাজনক অবস্থায় ডুলাহাজারা মিশন হাসাপতালে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থোয়াইচাহ্লা মারমার ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা অংসা থোয়াই।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.