জুম্ম জনগণ নিরাপত্তাহীন,অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে বেঁচে আসে-সন্তু লারমা

Published: 26 Jan 2025   Sunday   

একটা গ্রাফিতি নিয়ে যে প্রতিফলন ঘটেছে তা বাংলাদেশের ৫১টি ভাষাভাষি আদিবাসী জাতিসত্বা রয়েছে তাদের অস্তিত্বকে আজকে এদেশে অবাঞ্চিত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র  বোধিপ্রিয় লারমা ( সন্তু লারমা)।

তিনি বলেন, গ্র্রাফিতিতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান,ইসলাম এবং আদিবাসী লেখা রয়েছে সেখান থেকে আদিবাসী পাতাটি ক্রস  দেওয়া হয়েছে বা ছিড়ে ফেলা হয়েছে।  যদি বাংলাদেশ বহুজাতিক ও বহু সংস্কৃতিক দেশ হয়ে থাকে তাহলে এদেশে শুধু বাঙালী জাতি বাস করে না এখানে কমপক্ষে  আরো ৫১টি আদিবাসী জাতি বসবাস করে থাকে। আজকে সেই আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে অস্বীকার করা মানেই বাংলাদেশকে এক জাতি, এক রাষ্ট্র ও এক ধর্মের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।  

শনিবার রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জুম্ম জনগণের সামগ্রিক পরিস্থিতির আলোকে নাগরিক সমাজের ভূমিকা নিয়ে সুধী সমাবেশ ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সন্তু লারমা এসব কথা বলেন।

সন্তু লারমা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি অত্যান্ত অস্বাভাবিক ও ভয়াবহ। আজ পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৩ ভাষাভাষি ১৪টি আদিবাসী জনগোষ্ঠী নিশ্চিহৃ হওয়ার হওয়ার পথে। তাদের অস্তিত্ব শুধু ম্রিয়মান নয় অস্তিত্ব হারিয়েছে। পার্বত্যাঞ্চলের  জুম্ম জনগণ একটা নিরাপত্তাহীন, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে বেঁচে আসে। তারা বেচে থাকার জন্য তাদের মৌলিক অধিকারগুলো আদায়ের লক্ষে নানাভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছে।

আশিকা কনভেনশন হল রুমে আয়োজিত বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের পার্বত্যাঞ্চল শাখার উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আদিবাসী ফোরামের পার্বত্যাঞ্চল শাখার সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার সবাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য কেএসমং মারমা, আদিবাসী ফোরামের পার্বত্যাঞ্চল শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মধুমঙ্গল চাকমা, আইনজীবি দ্বীননাথ তংচংগ্যা, গুর্খা সম্প্রদায়ের নেতা মনোজ বাহাদুর গুর্খা, সিএইচটি নেটওযার্কের সাংগঠনিক সম্পাদক থোয়াইঅং মারমা, নারী নেত্রী নমিতা চাকমা, খুমী সম্প্রদায়ের নেতা লেলম খূমী,আদিবাসী ফোরামের পার্বত্যাঞ্চল শাখার বান্দরবানের সাংগঠনিক সম্পাদক অংশামং মারমা প্রমুখ। এছাড়া বক্তব্যে দেন শিশির চাকমা, এলভিন পাংখোয়া, মনু মরমু, অনুপ কুমার আসাম, থোয়াই প্রু খেয়াং,। জ্যোতিল বিহারী চাকমা। দর্পন ত্রিপুরা, চাথোয়াই রোয়াজা প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্যে দেন আদিবাসী ফোরা পার্বত্যাঞ্চল শাখার সাধারন সম্পাদক ইন্টুমনি তালুকদার। সভায় তিন পার্বত্য জেলা থেকে আদিবাসী অংশিজনরা অংশ নেন।

মতবিনিময় সভায় আদিবাসী নেতারা বলেন, বিগত ফ্যাসিষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার ১৭ বছর ক্ষমতায় থাকলেও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না করে ঝুলিয়ে রেখে আদিবাসী জুম্ম জনগণের সাথে বেঈমানী করেছিল। এ ফ্যাসিষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার জুম্ম জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বেধে দিয়েছিল ও  বিলীন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। বক্তারা আদিবাসীদের সাংবিধান্কি স্বীকৃতি ও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন মৌলিক অধিকারের লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি সন্তু লারমা  আরো বলেন, বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ভয় পায়। তার অন্যতম কারণ হল জাতিসংঘের ঘোষিত নিদের্শ বা পরামর্শ অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকার করে আদিবাসী শব্দ মেনে নিয়ে অনুস্বাক্ষর করতে হবে। তাহলে আদিবাসীদের জাতিসংঘের ঘোষিত অধিকারগুলো দিয়ে দিতে হবে। এ থেকেই বুঝা যায় এ দেশের সরকার গণতান্তিক ও  প্রগতিশীল নয়, উগ্র-সাম্প্রদায়িক ও উগ্রজাতীয়তাবাদী।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৭ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো আলোর মুখ দেখেনি দাবী করে সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে নাগরিক সমাজকে আরো জোরালো ভূমিকা থাকা দরকার। আদিবাসীদের আত্ননিয়ন্ত্রনাধিকার ও স্বাধিকার নিয়ে বেঁচে থাকলে হলে নীতি আর্দশের আলোকে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন সংগ্রামে এগিয়ে আসতে হবে। 

--সম্পাদনা/সিআর/হিলবিডি.

 

 

 

 

 

 

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত