রাঙামাটির কাউখালি উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের যৌথ খামার এলাকায় জীর্ণশীর্ণ বাড়িতে বসবাস সুরেশ চাকম(৭০) ও প্রতি রানী চাকমার (৬৫)পরিবার। বাড়িতে নেই বসার বা শোবার মতো কোন আসবাবপত্র। মাত্র একটি মাদুরেই তাদের সাংসার। অবশেষে সেই অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ালো কাউখালী উপজেলা প্রশাসন। একই সাথে তার নাতি কলিন চাকমারও পড়ালেখার দায়িত্ব নিয়েছে ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বেসরকারী টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর প্রশাসনের নজরে আসার পর মঙ্গলবার কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আতিকুর রহমান অসহায় সুরেশ চাকমার পরিবারকে নগদ অর্থ, শীতবস্ত্র, ও কাঁচাবাজার তুলে দিতে যান। এসময় উপস্থিত ছিলেন, কাউখালী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্কা মোঃ ফজলুর রহমান,ঘাগড়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ নাজিম উদ্দীন,ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দ্রা দেওয়ান প্রমুখ। এসময় উপজেলা প্রশাসন পরিবারটির সকল সমস্যার কথা শুনেন। প্রশাশনের পক্ষ থেকে সহযোগীতা পেয়ে খুশী পরিবারটি। স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক নাতিকে নিয়ে বসবাস সুরেশ চাকমার। স্ত্রী প্রতি রানী চাকমা কানে খুব একটা শোনে না ভালোভাবে দেখেন না চোখেও। বিয়ের পর নি:সন্তান সুরেশ দম্পত্তি দত্তক নেয় একটি মেয়ে সাধনা রানী চাকমাকে। তবে মেয়েটিও বাক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। মেয়ে বড় হওয়ার পর অনেক চেষ্টার ফলে বিয়েও দেন।
বিয়ের বছর খানেক পর মারা যান মেয়ের স্বামীও। তবে এর মধ্যে জন্ম নেয় একটি পূত্র সন্তান। এই চারজনের সংসার দু:খই যেন তাদের নিত্য সঙ্গী। সুরেশের পরিবার এলাকার আশেপাশে মানুষের দয়া ও দানে চলে তার সংসার। কেউ কিছু না দিলে থাকতে হয় না খেয়ে। আয় করতে অক্ষম সুরেশ চাকমা। বয়স্ক ও দারিদ্রতার পাশাপাশি ভুগছেন নানান শাররিক সমস্যায় শরীরে বেঁধেছে রোগ। আর্থিক সামর্থ্য নেই চিকিৎসা করানো। পাহাড়ের লতা পাতা খেয়েই তারা দিন পার করে থাকেন। স্থানীয় লোকজন কখনও সবজি কিনে দিলে সেগুলো সিদ্ধ করে খান তারা। কেউ চাল দিলে তা করা হয় রান্না। মাছ বা মাংস তা তাদের জন্য স্বপ্নের। তবে কবে মাংস ও মাছ খেয়েছেন তাও জানা নেই তাদের।
পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখার পর আর্থিক সংকটে পড়ালেকা করতে পারেনি একমাত্র নাতি কলিন চাকমা। এলাকার লোকজন তুলে দিয়েছেন ছোট একটি বেড়ার ঘর। লজ্জা নিবারনের জন্য নেই কোন ভাল কাপড়ও। সুরেশ চাকমার এমনই দুর্ভাগ্য যে ভুলশত জাতীয় পরিচয় পত্রেও বর্তমান বয়স ৫০ বছর রয়েছে। তার প্রকৃত বয়স ৭০ বৎসর। এজন্য পাননি কোন বৃদ্ধ ভাতা থেকে সরকারী সুযোগ সুবিধা। সুরেশ হারনিয়ার চিকিৎসা করাতে না পারায় শাররীক যন্ত্রনায় ভুগতে হচ্ছে তাকে। যন্ত্রনায় ঘুমাতে পারেন না রাতেও। কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন যাপন করতে হচ্ছে।
সুরেশ চাকমা ও তার স্ত্রী প্রতি রানী চাকমা জানান, প্রশাসনের এ সহযোগিদতা পেয়ে তারা খুবই খুশি। প্রশাসনের কাছ থেকে যে সহযোগিতা পাবেন তাদের জন্য না হলেও তার নাতির ভবিষ্যৎ জীবনে উপকারে আসবে।
ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দ্রা দেওয়ান জানান, অসহায় সুরেশ চাকমার নাতী কলিন চাকমার যাবতীয় পড়ালেখার দায়িত্ব বিদ্যালয় নিয়েছে।
ঘাগড়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ নাজিম উদ্দীন জানান, বিগত সরকারের আমলে যে ঘরগুলো দেওয়া হয়েছে সেই ঘরে সুরেশ চাকমা যেতে রাজি হননি। কারন তিনি নিজ ভিটা ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে রাজি ছিলেন না।
কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আতিকুর রহমান, বেসরকারী টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর তার প্রশাসনের নজরে পর অসহায় এ বৃদ্ধ পরিবারকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতেও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ এ সহযোগিতা করা হবে।
-- সম্পাদনা/সিআর/হিলবিডি.