পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হলে ১৯০০ সালের শাসনবিধির অস্তিত্বই থাকবে না-সন্তু লারমা

Published: 21 Jun 2024   Friday   

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যদি বাস্তবায়িত না হয় তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রাম ১৯০০ সালের শাসনবিধির কোন অস্তিত্বই থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা(সন্তু লারমা)।

তিনি বলেন, জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব সংরক্ষনের ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্য দীর্ঘ সংলাপের পর ১৯৯৭ সালের স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তি ও ১৯০০ সালের শাসনবিধির প্রেক্ষাপট রয়েছে। তাই এ শাসনবিধি কোন অংশে সংশোধন এনে তা যদি পার্বত্য চুক্তির সাথে সংহতিপূর্ন না হয় তাহলে কোনভাবে নেওয়া হবে না। আজকের সরকারের বিশেষ মহল আদালতে আনা হলে আমরা তা মানতে পারি না। কারণ পার্বত্য চুক্তির সাথে, জুম্ম জনগণের অস্তি¡ সংরক্ষণে, জুম্ম জনগনের সামাজিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে কোনভাবে সংহতিপূর্ন নয়।

সন্তু লারমা  আরো বলেন, সরকারের একটি বিশেষ মহলের পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম ১৯০০ সালের শাসনবিধির যে সংশোধনী আনা হচ্ছে তা যথাযথ সঠিক নয়। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জগণের অস্তিত্ব বিলুপ্তির প্রক্রিয়া ছাড়া অন্য কিছু নয়।পার্বত্য চট্টগ্রাম ১৯০০ সালের শাসনবিধিকে খর্ব করে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের দশ ভাষাভাষি ১৩  জুম্ম জাতিসত্বাসমূহের অধিকার খর্ব  করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। 

তিনি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে ও ১৯০০ সালের শাসনবিধি নিয়ে ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিহত করতে তরুন সমাজ থেকে হেডম্যান(গ্রাম প্রধান),কারবারী(গ্রাম প্রধান)সহ সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

শুক্রবার রাঙামাটির রাজদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্ক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে হেডম্যান সম্মেলনে প্রধান অতিথি বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সন্মেলনে সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সভাপতি কংজরি চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান, জেলা হেডম্যান এসোসিয়েশনের সভাপতি চিংকিউ রোয়াজা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য সুবীর কুমার চাকমা, সিএইচটি নারী হেডম্যান নেটওয়ার্কের সভাপতি জয়া ত্রিপুরা। সন্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন চাকমা সার্কেল চীফ দেবাশীষ রায়। মোমবাতি প্রজ্জ্বালনের মধ্য দিয়ে সন্মেলনের উদ্বোধন করেন মং সার্কেল চীফ সাচিংপ্রু চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্যে রাখেন সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সাধারন সম্পাদক শান্তি বিজয় চাকমা। দিন ব্যাপী সন্মলেন তিন পার্বত্য জেলা থেকে দুই শতাধিক হেডম্যান ছাড়াও কারবারীরা অংশ নেন। সম্মেলনের শেষে তিন বছর মেয়াদে ৩১ সদস্যর নতুন কমিটি ঘোষনা করেন সন্তু লারমা। এতে সভাপতি হিসেবে কংজরী চৌধুরী, সাধারন সম্পাদক শান্তি বিজয় চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক জয়া ত্রিপুরাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।

সন্তু লারমা তার বক্তব্যে বলেন, সন্তু লারমা আরো বলেন, পার্বত্য চুক্তির ২৬ বছরের মধ্যে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী বিগত ১৭ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নসহ কোন বিষয়ে যথাযথ ভূমিকা রাখেননি। প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে চুক্তি বাস্তবায়ন ও ১৯০০ সালের শাসনবিধি সংশোধনী বাতিলের বিষয়ে অনুরোধ করলে তিনি সাথে সাথে ব্যবস্থা নেবেন তা যথাযথ মনে করি না। কারণ ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বহুবার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন ও ১৯০০ সালের শাসনবিধি বিষয় নিয়ে মতবিনিময় হয়েছে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৬ বছর হলেও এখনো কোন আলোর মুখ দেখেনি। বরংশ এ চুক্তি ভুলে যেতে দেশে-বিদেশে যারা জুম্মজনগণ রয়েছেন তারা যেন এ চুক্তি ভুলে যেতে বাধ্য হয় সেই প্রক্রিয়ায় রয়েছে সরকার। ১৯০০ সালের শাসনবিধিকে যে সমস্যার জন্ম দেওয়া হয়েছে সেই প্রক্রিয়ারও একই দিক।

সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ১৯০০ সালের শাসনবিধি নিয়ে যে তালবাহানা বা ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম চলছে সেগুলো প্রতিরোধ ছাড়া প্রতিবিধান হবে না। সুতরাং চিঠি লেখা, অনুরোধ-অবরোধ, সংবাদ সন্মেলন,মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দিয়ে কিছুই হবে তা আশা করি না আর। তাই সরকারের ওপর ততটুকু চাপ প্রয়োগ করতে হবে যেটুকু করলে এ প্রক্রিয়া বন্ধ করবে।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, পার্তব্য চট্টগ্রাম ১৯০০ সালের শাসনবিধিতে এ অঞ্চলে জাতিসমূহের পরিচয়, সত্তা, স্বকীয়তা ও অধিকার অন্তর্নিহিত রয়েছে । এ শাসনবিধিটি ব্রিটিশ আমলের ১৯০০ সাল থেকে আজ ১২৪ বছর পর্যন্ত জীবিত রয়েছে। শুধু তাই নয় প্রথাগত আইন থেকে শুরু করে সকল প্রতিষ্ঠান এবং পার্বত্য চুক্তির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ আইনে স্থান পেয়েছে ও সরকার ১৯৯৭ সালে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এ আইনের পক্ষ নিয়ে। তাই আমাদের প্রথাগত চিরাচরিত প্রাতিষ্ঠানিক অধিকার এ আইনে নিহিত রয়েছে। সুতরাং এ আইন আমাদের অধিকার নিশ্চিতে প্রথম পিলার। এটা খর্ব হবে বা এটার ওপর আঘাত হানবে সেটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া হবে না। এ সংশোধনীর বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।

তিনি আরো বলেন, কিছু স্বার্থন্বেসী মহল, যারা গণতন্ত্র মানে না, যারা জুম্ম বা আদিবাসীদের অস্তিত্ব মানে না, শুধু মাত্র একটা মামলায় অথবা আদালতে একটা রায়ে আমাদের শেকড়কে উপরে ফেলা এত সহজ নয়। তাই শুধু হেডম্যান-কার্বারী নয় সমস্ত জুম্ম জাতিকে সজাগ থাকতে হবে। প্রয়োজনে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

--হিলবিড২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত