কাপ্তাইয়ে ছাত্রীকে হত্যার দায়ে শিক্ষককে মৃত্যুদন্ডের আদেশ

Published: 13 Jun 2024   Thursday   

রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের পুর্ব কোদালা এলাকায় তৃতীয় শ্রেনী ছাত্রীকে ধর্ষনের চেষ্টা ও হত্যার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় অংবাচিং মারমা ওরফে বামংকে অর্থদন্ডসহ মৃত্যুদন্ডাদেশ দিয়েছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল আদালত। একই সাথে আদালত আসামীর মৃত্যু না হওয়া পর্ষন্ত তাকে ফাঁসির দঁড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেন। বৃহস্পতিবার রাঙামাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল আদালতের বিচারক এ,ই,এম ইসমাইল হোসেন এ আদেশ দেন।

আদালতে রায়ে বলা হয়, ২০১৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারী কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের পুর্ব কোদালা এলাকায় তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রী মিতালী মারমা বদ্দ পাড়ায় তার মামার বাসায় প্রাইভেট পড়তে যায়। এ সময় আসামী প্রাইভেট শিক্ষক অংবাচিং মারমা ওরফে বামং বাকী শিক্ষাথীদের ছুটি দিয়ে ভিক্টিমকে আরো পড়ানোর আজুহাতে রেখে দেয়। এক পর্যায়ে একা পেয়ে আসামী ধর্ষন করতে চাইলে ভিক্টিম কান্নাকাটি ও চিৎকার করে। এতে আসামী ক্ষিপ্ত হয়ে ভিক্টিমের মুখ চেপে ধরে ও এক পর্যায়ে ভিক্টিমকে গলায় সূতালি ও কাপড়ের ব্যাগের ফিতা দিয়ে প্যাচিয়ে ফাস লাগিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এর লাশ লাশ বস্তায় ভরে ঘরের মাচাং এর উপর তুলে রাখে। এতে ভিক্টিম বিকালে বাসায় না যাওয়ায় তার বাবামা ও প্রতিবেশীরা খুঁজতে থাকে। পরে আসামীর কাছে গিয়ে ভিক্টিমের খোজ জানতে গেলে আচরণের সন্দেহ হওয়ায় তার ওপর নজর রাখে। পরে আসামী রাতের বেলায় বস্তায়বন্দি লাশ নিয়ে বের হলে হাতেনাতে ধরা পড়ে পাড়াবাসীর কাছে। এতে বস্তা খুলে ভিক্টিম মিতালী মারমার লাশ দেখতে পায়। এতে পাড়াবাসী ক্ষুদ্ধ হয়ে গণ পিটুনি দেয় ও পুলিশকে খবর দিলে আসামী বামংকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে কাপ্তাই থানায় ভিক্টিমের বাবা সাথুই অং মারমা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষনের চেষ্টা, হত্যা ও লাশ গুমের চেষ্টায় মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ ছয় বছর মামলা চলার পর বৃহস্পতিবার চাঞ্চল্যকর এ মামলার চুড়ান্ত রায় দেন রাঙামাটি জেলা দায়রা জজ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালের বিচারক এ,ই,এম ইসমাইল হোসেন। এসময় বাদী-বিবাদীর উপস্থিতিতে রায় পড়ে শুনান বিচারক। রায়ে বিচারক যাবতীয় সাক্ষ্য প্রমানাদি সাপেক্ষে আদালতের বিচারক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আসামী বামংকে দশ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং পঞ্চাশ হাজার টাকা ও পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৩০২ ধারার অপরাধে দায়ে মত্যুদন্ড ও এক লক্ষ টাকা জরিমানা ধার্য্য করেন। একই সাথে আসামি মৃত্যু না হওয়া পর্ষন্ত তাকে ফাঁিসর দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেন বিচারক। তবে আসামী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০ এর ২৮ ধারা অনুযায়ী এ দন্ডাদেশ ও সাজার বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে ৬০ দিনের মধ্য আপীল দায়ের সুযোগ পাবেন বলে আদেশে জানানো হয়। এছাড়া আসামীকে ৬০ দিনের মধ্যে ধার্য্যকৃত জরিমানার অর্থ ভিক্টিমের বাবামাকে ক্ষতিপুরণ দেওয়ারও আদেশ দেওয়া হয়।

ভিক্টিমের বাবা সাথুই অং মারমা তার মেয়ের হত্যাকারীকে আদালত যে ফাঁসির আদেশের রায় দিয়েছে তিনি খুশি হয়েছেন জানিয়ে আদালতের দেওয়া ফাঁসির রায় দ্রæত কার্যকরের দাবী জানিয়েছেন।

আসামী পক্ষের আসামী আইনজীবি মামুনুর রশীদ মামুন বলেন, আসামী ও তার পরিবারের সাথে আলাপ-আলোচনা করে উচ্চতর আদালতে আপীল করা হবে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি মোঃ সাইফুল ইসলাম অভি এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এ রায়ের ফলে রাষ্ট্র ও সমাজ থেকে নারী ও শিশু ধর্ষনের মতো জঘন্য অপরাধ রোধ হবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে সমাজে আর কোন ব্যক্তি এ ধরনের জঘন্য অপরাধ করা আর সাহস পাবে না।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত