পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ী সম্প্রদায়ের প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু-সাংগ্রাই-বৈসু-বিষু-চাংক্রান,বিহু-কে সামনে রেখে বুধবার রাঙামাটিতে বর্নাঢ্য র্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় পাহাড়ের মানুষ মন খুলে ও হাসিখুশিতে প্রধান সামাজিক উৎসবটি উদযাপন করতে পারছে না। নেতৃবৃন্দ পাহাড়ের পুরানো রীতিনীতি, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার পাশাপশি এ প্রধান সামাজিক উৎসবের মধ্য দিয়ে সম্প্রীতি বন্ধনে ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিজু-সাংগ্রাই-বৈসু-বিষু-চাংক্রান,বিহু এর উদযাপন কমিটির উদ্যোগে রাঙামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গনে র্যালীর উদ্বোধন করেন জাতীয় মানবধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চাকমা সার্কেল চীফ দেবাশীষ রায়। উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন, সাবেক সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য চঞ্চু চাকমা, এ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা, সাংস্কৃতিক কর্মী শিশির চাকমা। স্বাগত বক্তব্যে রাখেন উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ইন্টু মনি তালুকদার। অনুষ্ঠান শুরুতে আদিবাসী শিল্পীরা মনোমুগ্ধকর নৃত্য পরিবশেন করেন। পরে পৌর সভা প্রাঙ্গন থেকে জেলা শিল্পকলা একাডেমী চত্বর পর্ষন্ত একটি বনার্ঢ্য র্যালী বের করা হয়। র্যালীতে আদিবাসী নারী-পুরুষরা তাদের ঐহিত্যবাহী পোশাকা-আশাক ও ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে অংশ নেন।
সাবেক সাংসদ উষাতন তালুকদার বলেন, পার্বত্য চুক্তির ২৬ বছর পরেও জীবন আমাদের নয়। কারোর দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। তাই আজ পাহাড়ের মানুষের মাঝে হাসি-খুশির সেই মুখ আর নেই। উৎসব পার্বন প্রাণ খুলে উদযাপন করতে পারছে না। কেন এর উত্তর সরকারকে, নীতি-নির্ধারক ও দেশের মানুষকে ভাবা উচিত। কারণ কাউকে পেছনে ফেলে রেখে দেশ কখনো এগিয়ে যেতে পারে না। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সারা দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে দেখতে পায় বান্দরবানে ১৮ জন নারী কারাগারে, ১৪টি অস্ত্র লুঠ হয়েছে। কেন এগুলো হচ্ছে, হয়তো আরো অনেক কিছু দেখতে পাবো।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, আমাদের পুরাতন ও সনাতনী রীতিনীতির কৃষ্টি,সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রয়েছে। তবে তথাকথিত আধুনিকতা ও তথাকথিত অতি শিক্ষিত হয়ে যে মুল কৃষ্টি সংস্কৃতি ঐতিহ্যর অংশগুলো যাতে আমরা ভূলে না যায়। কারণ শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম ও দেশে নয়, বাইরের দেশের সংস্কৃতি কৃষ্টি ঢুকে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছে। মন খুলে প্রধানমন্ত্রীকে আমরাদের দুঃখ ও বঞ্চনার কথা শুনিয়েছি, তিনি মন দিয়ে শুনেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি পাহাড়ে পাতানো খেলা ও মাঝে মধ্যে কৃত্রিমভাবে সংঘাতের নাটক সাজানো হয়। এসব নাটকের যদি অবসান না ঘটে তাহলে পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়ন হতে পারে না, পাহাড়ী হিসেবে, বাংলাদেশী হিসেবে আমরা মাথা উচু করে রাখতে পারবো না।
তিনি বলেন, আমাদের যেমন বঞ্চনার কথা রয়েছে তেমনি আশার কথাও রয়েছে। কারণ যারা তরুন-তরুনী ও কিশোর-কিশোরীরা রয়েছে তারা বঞ্চনার কথা শুনতে শুনতে নিরাশ হয়ে যাবে তারা সংগ্রাম করতে পারবে না। তাদের আশার বাণী শুনাতে হবে। তবে অবশ্যই যারা বঞ্চিত তাদের পাশে দাড়াতে হবে ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে হবে। যাতে পরবর্তী প্রজন্ম তাদের নিজস্ব স্বকীয়তা, শক্তি ও উদ্যোম নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারে।
উল্লেখ্য, আগামী শুক্রবার থেকে তিন দিনের এ উৎসব শুরু হবে। উৎসবটি পাহাড়ের একেক সম্প্রদায়ের কাছে আলাদা নামে পরিচিত।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.