পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের(পিসিপি) রাঙামাটি জেলা শাখার ২৫তম বার্ষিক শাখা সম্মেলন শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সন্মেলনের মাধ্যমে জিকো চাকমাকে সভাপতি, টিকেল চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও সুমন চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ২৭ সদস্য বিশিষ্ট পিসিপির জেলা শাখার নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে।
"সকল প্রকার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে ছাত্র সমাজ অধিকতর সামিল হউন- শ্লোগানে সকালের দিকে রাঙামাটি সাংস্কৃতিক ইনষ্টিডিউট মিলনায়তনে সন্মেলনের উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও সাবেক সাংসদ উষাতন তালুকদার। পিসিপির জেলা শাখার সভাপতি জিকো চাকমার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুবিনা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির জেলা শাখার সভাপতি সুমিত্র চাকমা, পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নিপন ত্রিপুরা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জেলা শাখার সভাপতি ম্রানুচিং মারমা। পিসিপি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক টিকেল চাকমার সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি জেলা শাখার তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সুমন চাকমা। সন্মেলনে শুরুতে এযাবৎ কালে জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধীকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আত্মবলিদানকারী সকল মৃত্যুবরণকারীদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এর আগে জাতীয় পতাকা ও বেলুন উড়িয়ে সন্মেলনের উদ্বোধন করেন উষাতন তালুকদার।
বিকালে দ্বিতীয় পর্বে সন্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিল অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদক জলি মং মারমা। বিশেস অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সহ সম্পাদক জুয়েল চাকমা ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক থোয়াইক্যজাই চাক। সন্মেলনে জেলা শাখার বিভিন্ন থানা ও কলেজ কমিটির প্রতিনিধিরা সাংগঠনিক বক্তব্য তুলে ধরেন। পরে জিকো চাকমাকে সভাপতি , টিকেল চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও সুমন চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ২৭ সদস্য বিশিষ্ট পিসিপি রাঙামাটি জেলা শাখার নতুন কমিটি গঠন করা হয়্ নতুন কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান পিসিপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার বলেন, দীর্ঘ ২৪ বছর সশস্ত্র লড়াই করে সরকারকে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছি। আমরা ঐক্যবদ্ধ জাতি বলে দেখিয়েছি অধিকার আদায়ে লড়াই করা যায়। তবে সরকার এ পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে কালক্ষেপণ করছে। অন্যদিকে চুক্তি বিরোধী নানা ষড়যন্ত্রমূলক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ে আমাদের অনেক বসন্ত পার হয়ে গেলেও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সবাইকে লড়াইয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে। বান্দরবানে সরই ইউনিয়েন ম্রোদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়। ম্রোরা যেখান থেকে পানি সংগ্রহ করে সেই ঝিড়িতেও ভূমিদস্যুরা বিষ মিশিয়ে দিয়েছে। অথচ প্রশাসন নিশ্চুপ ভূমিকায় রয়েছে। ম্রোরা তারপরও নিজ বাস্তুভিটা রক্ষায় লড়াই করে ঠিকে রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ছাত্র অবস্থা থেকেই এমএন লারমা রাজনৈতিকভাবে সচেতন ছিলেন। ১৯৬০ সালে এমএন লারমা মরণফাঁদ কাপ্তাই বাঁধের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। তিনি বলেছিলেন আমরা সংখ্যায় কম, তাই সংগঠন করে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এমএন লারমার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার দূরদর্শীতা থেকে শিক্ষা নেওয়া দরকার। এমএন লারমারা গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুণেধরা জুম্ম সমাজকে রাজনৈতিক চেতনায় উজ্জীবিত করেছেন।
সংগ্রাম ছাড়া অস্তিত্ব ঠিকে থাকবে না উল্লেখ করে তিনি ছাত্রদের উদ্দেশ্য বলেন, অযথা সময় নষ্ট না করে পড়ালেখা করতে। জ্ঞান অর্জন করে সমাজ বিনিমার্ণে এগিয়ে আসতে হবে। সত্যিকার জ্ঞান অর্জন করে সংকীর্ণতা কাটিয়ে উঠতে হবে। শিক্ষিত হওয়া মানে নিজের শিকড়কে ভুলে যাওয়া নয়। নিজের সংস্কৃতি আমাদের আসল পরিচয়। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে মাথা উচু করে বেঁচে থাকার সাহস অর্জন করতে হবে।শিক্ষার কোনো শেষ নেই। ভুল চিন্তাধারা পাশ কাটিয়ে ভালো কাজে মনযোগী হতে হবে। মতাদর্শগত সংগ্রামের মাধ্যমে কর্মীদের এগিয়ে যেতে হবে। আর্থসামাজিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে সংগ্রামের রূপরেখা নির্ধারণ করে কাজ করতে হবে। বিশ্বরাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। আমাদের জীবন সংগ্রামমুখর। যোগ্য হতে হবে, ত্যাগের মানসিকতা থাকতে হবে।
তিনি আরো বলেন, তৎকালীন জেলা প্রশাসক এইচটি ইমামের ষড়যন্ত্রের কারণে জুম্মরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করতে পারেনি। দেশের অধিকাংশ মানুষ এ বৈষম্যের কথা জানে না। তবুও, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে জুম্ম জনগণ হৃদয়ে ধারণ করে রাখে। দেশের কাজে অনেক জুম্ম উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। তিনি জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার শপথ নিয়ে যার যার কর্মস্থলে ফিরে ফিরে গিয়ে কাজ করার আহবান জানান।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.