অশ্রুসিক্ত নয়নে আত্বীয়-স্বজন,দিঘীনালাবাসী ও সহকর্মীরা পাহাড়ে মেধাবি সাংবাদিক ও প্রথম আলোর দীঘিনালা উপজেলা প্রতিনিধি পলাশ বড়ুয়াকে শেষ বিদায় জানালেন। শেষ একবার তাকে দেখার জন্য বৃহস্পতবিার দীঘিনালা উপজেলা সদরের পশ্চিম কাঠালতলীস্থ গ্রামে ছুটে যান সরকারী কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, সংবাদকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা থেকে সাংবাদিক পলাশ বড়ুয়ার মরদেহ পৌছালে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা সদরের নিজ গ্রামের পশ্চিম কাঠালতলীস্থ শালবন বৌদ্ধ বিহারে রাখা হয়। সকাল থেকে তাকে এক নজর দেখার জন্য পাহাড়ী-বাঙালীর সব বয়সী শত শত লোকজন ছুটে যান। সেখানে পলাশ বড়ুয়ার শেষ বিদায় উপলক্ষে এক অনিত্য সভা (শোক সভা) ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সভার শুরুতে পলাশ বড়ুয়ার মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের লোকজন। পরে অনিত্য সভায় অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্যে রাখেন দীঘিনালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী মো. কাশেম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরাফাতুল ইসলাম, খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য কল্যাণ মিত্র বড়ুয়া, দৈনিক প্রথম আলো’র যুগ্ম-বার্তা সম্পাদক ও কবি ওমর কায়সার, খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সভাপতি জীতেন বড়ুয়া, খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী, রাঙমাটির দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রামের সম্পাদক ফজলে এলাহী, দীঘিনালা প্রেস ক্লাবের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম রাজু প্রমুখ। এরপর পলাশ বড়ুয়ার পরলৌকিক কামনায় পঞ্চশীল প্রার্থনা,সংঘদানসহ ধর্মীয় অনুষ্ঠান করা হয়। পরে
পশ্চিম কাঠালতলীস্থ মহাশ্মশানে তার দাহক্রীয়া সম্পন্ন হয়।
জানা গেছে, গেল রোববার (৩০ জুলাই) রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় বেড়াতে গিয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার জন্য তাঁকে প্রথমে লংগদুর একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থা অবনতি হলে তাকে খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তির পর চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হলে তাঁকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। গেল বুধবার রাতে তিনি ঢাকার শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। সাংবাদিক পলাশ বড়ুয়া খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বোয়ালখালী ইউনিয়নের পশ্চিম কাঁঠালতলী এলাকার মৃত স্বদেশ বড়ুয়া ও মৃত সুজাতা বড়ুয়ার বড় ছেলে।
সাংবাদিক পলাশ বড়ুয়া পাহাড়ি জনপদে সাংবাদিকতার পাশাপাশি মানবিক সমাজকর্মী এবং লেখক হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪৯ বৎসর। মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলে, স্ত্রী, আত্মীয়স্বজন ও অসংখ্য শুভাকাঙ্খী রেখে গেছেন। তার অকাল মৃত্যতে খাগড়াছড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এদিকে সাংবাদিক পলাশ বড়ুয়া’র অকাল মৃত্যুতে খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, সংরক্ষিত নারী এমপি বাসন্তী চাকমা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু, খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র এবং জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী পৃথক পৃথক বিবৃতিতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন।
,
খাগড়াছড়ির সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা এক বিবৃতিতে বলেছেন, পলাশ বড়ুয়া ছিলেন সবুজ পাহাড়ের চারণ সাংবাদিক। দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় ধরে পাহাড়ের মানুষের আনন্দ বেদনা পাওয়া না পাওয়ার কথা তুলে ধরেছেন তিনি। দীঘিনালাতে তাঁর কাজের ক্ষেত্র হলেও তার লেখা প্রতিবেদন,ছবি পাহাড়-সমতল ছাপিয়ে বিদেশেও সুনাম কুড়িয়েছে। দরিদ্র মানুষের মন জয় করে নেয়ার মতো হৃদয়স্পশী পলাশ বড়ুয়ার সাংবাদিক নতুন প্রজন্মের জন্য আদর্শ হয়ে থাকবেন। পাহাড়ের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে তিনি তাঁর সাংবাদিকতা জীবনকে বিস্তৃত করে গেছেন।
“আমার মৃত্যুতে গোলাপ ফুল দিও না, উলু ফুল দিও”
সাংবাদিক পলাশ বড়ুয়া মৃত্যুর মাত্র ৫দিন আগে তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন “আমার মৃত্যুতে গোলাপ ফুল দিও না, উলু ফুল দিলে খুশী হবো” কে জানে সাংবাদিক পলাশ এমন লেখা লিখে সবাইয়ের কাছ থেকে চির বিদায় নেবেন! তার স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীরা কেউই ভাবতে পারেনি এভাবে তিনি চুপিচারে শেষ বিদায় নেবেন। তবে তার সহকর্মীরা ফেসবুক ওয়ালে লেখা শেষ ইচ্ছাটা পূরণ করে দিয়েছেন। পলাশের নিথর মরদেহে তার সহকর্মীরা উলু ফুল দিয়ে তাকে শেষ বিদায় জানিয়েছেন।
বিদায় পলাশ .........
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.