শান্তি ও মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে লাখো পূর্ণার্থীর শ্রদ্ধা এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য্যের মধ্য দিয়ে শুক্রবার রাঙামাটি রাজবন বিহারে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পন্ন হয়েছে।
রাঙামাটি রাজ বন বিহার প্রাঙ্গনে আয়োজিত ৪৯তম দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহনকারী পূর্নার্থীদের উদ্দেশ্য স্ব-ধর্ম দেশনা দেন বিহারের ভিক্ষু-সংঘের প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির ও ইন্দ্রগুপ্ত মহাস্ববির। বক্তব্যে দেন খাদ্য খাদ্য মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার,এমপি, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রæ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, চাকমা সার্কেল চিফ (চাকমা রাজা) ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম, রাঙামাটি পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী,চাকমা সার্কেল চিফের সহধর্মিণী (চাকমা রাণী) য়েন য়েন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান, জেলা বিএনপির নেতা দীপন তালুকদার, রাজবন বিহারের কার্যনির্বাহী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমিয় খীসা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে তিন পার্বত্য জেলা ছাড়াও কয়েকটি দেশের বৌদ্ধ পূর্নার্থীসহ লাখো মানুষের সমাগম ঘটে।
এর আগে বুদ্ধ সংগীত দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। পরে পঞ্চশীল, অষ্টশীল, বৌদ্ধ মূর্তি ও কঠিন চীবর উৎস্বর্গের পর মহাপূর্নবর্তী বিশাখা প্রবর্তিত ২৪ ঘন্টার মধ্যে তৈরীকৃত কঠিন চীবর উপস্থিত ভিক্ষু-সংঘের কাছে প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠান ২৪ ঘন্টায় তৈরীকৃত চীবর রাঙামাটি মহাপরিনির্বাণপ্রাপ্ত বনভন্তের শীর্ষ রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের ভিক্ষুসংঘের প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবিরের হাতে চীবর উৎসর্গ করেন চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। চীবর উৎসর্গের সময় ভক্তদের সাধু. সাধু. সাধু কন্ঠধ্বনিতে রাজবন বিহারের সমগ্র আশেপাশে এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।
বিহার প্রাঙ্গনে আগত লাখো লাখো পুর্ণার্থীর সামনে রাজবন বিহারের প্রধান মহাপরিনির্বাণপ্রাপ্ত শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভন্তের অমৃত কথা অডিও উপস্থাপন করা হয়। পরে আয়োজিত স্বধর্ম দেশনা দেন রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের ভিক্ষু সংঘের প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির ধমীয় দেশনা প্রদান করেন আগত দায়ক দায়িকার উদ্দেশ্যে। এসময় তিনি কৌশল কর্ম, সৎ চেতনা ও সৎ জীবন নিয়ে জীবন যাপন করার জন্য হিতোপোদেশ দেন।
উল্লেখ্য, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় গেরুয়া কাপড় কেবলা হয় চীবর। প্রাচীন নিয়ম মতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে চরকায় সূতা কেটে, সূতা রং করে আগুনে শুকিয়ে সেই সুতায় তাঁতে কাপড় বুনে চীবর তৈরী করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয় বলে এর নাম কঠিনচীবর দান। বিশ্বের আর কোথাও এ নিয়মের প্রচলন নেই। বৌদ্ধ শাস্ত্র মতে, দীর্ঘ আড়াই হাজার বছর পূর্বে গৌতম বুদ্ধের শিষ্য বিশাখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে চীবর তৈরীর প্রচলন করেছিলেন। প্রতিবছর আষাড়ী পূর্ণিমা থেকে কার্তিকী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিনমাস বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ষাবাস শেষে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের চীবর দান করতে হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৩ সাল থেকে বুদ্ধের শিষ্য বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে রাঙামাটি রাজবন বিহারে ৪৯ বছর ধরে কঠিন চীবর দান উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.