চার বছর ধরে খোলা আকাশের নিচে শিকলবন্দি মেহেদি হাসান

Published: 02 Jun 2021   Wednesday   

খাগড়াছড়িমহালছড়ি উপজেলা সদরের মোহাম্মদপুর এলাকায় পুকুরপাড়ে মোঃ মেহেদি হাসানের পরিবারের বসবাস। মোঃ কেনাল মিয়া বকুল খাতুনের ছেলে তিনি। তার বাবা জেলে। মানুষের জাল দিয়ে মাছ ধরে কোনরকম তাদের জীবন যায়। মা বকুল খাতুন ১২ বছর ধরে মানসিক প্রতিবন্ধী। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন মেহেদি হাসান।  স্ত্রী ও সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হতদরিদ্রের পরিণত হয়েছেনমোঃ কেনাল মিয়া।  

 

জ্যৈষ্ঠ  মাসের প্রখর রোদে খোলা আকাশের নিচে বসে আছে তরুণ মেহেদি হাসান (২৬)। সবুজ গাছ ঘাসালি পুকুরের পাড়ে শিকলে বাঁধা অবস্থায় দিন-রাত পার করছেন তিনি। বামপায়ে লোহার শিকলেবাঁধা, থাকে তালা পরানো।

 

মানসিক ভারসাম্য হারানোর পর গত চার বছর ধরে শিকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায় এভাবে ঝড়, তুফান ও বৃষ্টির মাঝেও খোলা আকাশের নিচে জীবন পার করছেন তিনি।

 

মেহেদি হাসানের মামা মো. সাহাদুল ইসলাম জানান, আমার ভাগিনা হঠাৎ করেঅষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। আর্থিক সার্মথ্য অনুযায়ী চিকিৎসা করানোর পর সুস্থ হয়নি ছেলেটি। চার বছর ধরে এভাবেইপুকুরপাড়ে  জীবন পার করেছে। কোনো সহযোগিতা আমরা পাইনি। আমার ভাগিনা ও বোনেরচিকিৎসা করাতে গিয়ে পুরো পরিবার এখন নিঃস্ব। তাদের মাথা গোঁজার মতো ঠাঁইও  হারিয়ে গেছে।

 

তিনি আরও বলেন, শিকল খুলে দিলে মানুষের সঙ্গে মারামারি করে। এর আগে মহালছড়ি বাজারে একজন মহিলাকে ইট দিয়ে ছুঁড়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। পরে মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়। এর পর লোকজন জোর করে তাকে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেনঝড়, তুফান ও রোদে ও এই পুকুর পাড়ে থাকে ভাগিনা। পুকুর পাড়ে টিনের ছাউনি ছিল, খাট ছিল; সেগুলো সে (মেহেদি হাসান) পানিতে ফেলে দিয়েছে। এখনএভাবে থাকছে।

 

এ সময় অভিযোগ করে তিনি বলেন, কোন প্রতিষ্ঠান তাদেরকে (মেহেদি ও বকুল খাতুন) সহযোগিতা করেনি। একই পরিবারে মা ও ছেলে মানসিক প্রতিবন্ধী হলেও তারা কোনো ভাতার আওতায় আসেনি।

 

মহালছড়ি তরুণ সংগঠক মোঃ জিয়া জানান, সে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ভালো করেই  পড়াশোনা করেছে। তাদের ঘরবাড়ি নেই। মা ও ছেলে দুজনই মানসিক প্রতিবন্ধী। তাদের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। এ পর্যন্ত তারা কোনো ভাতা পায়নি। সবার উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো।

 

মেহেদি হাসানের মামা মো. ইস মাইল বলেন, আমরা ও দিনমজুরী করে সংসার চালায়। আর্থিক ভাবে তেমন সক্ষম না। সরকার তাদের পুনর্বাসন করার ব্যবস্থা করলে ভালো হতো।

 

মহালছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রতন কুমার শীল জানান, সে তো মানসিক প্রতিবন্ধী এবং কার্ড পাওয়ার যোগ্য।  শিগগিরই তাদের প্রতিবন্ধী কার্ড করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

 

মহালছড়ি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শামসুল আলম জানান, আমাদের প্রতিবন্ধী জরিপ কার্যক্রম আছে। ফরম পূরণ করে ভাতা ভোগীদের চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়। চিকিৎসক দ্বারা প্রতিবন্ধী ক্যাটাগরি অনুযায়ী অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর উপজেলা প্রতিবন্ধী শনাক্ত করণ কমিটি যাচাই-বাছাই করার পর তাদের ভাতার আওতায় আনা হবে। এর আগে সম্ভব না। ওরা যদি ফরমটা পূরণ করে দেয়, ডাক্তারের প্রত্যয়ন পত্র জমা দেয়, তাহলে আমরা সাথে সাথে করে দিতে পারবো।

 

খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিবন্ধীবিষয়ক কর্মকর্তা মো. শাহজাহান বলেন, তাদের  দ্রুত রাষ্ট্র প্রদত্ত প্রতিবন্ধী সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনা হবে। আমি সরেজমিন পরিদর্শন করে তাদের সহায়তার উদ্যোগ নেব।

 

-----হিলবিডি/সম্পাদনা/এ,ই

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত