চলমান করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে এবছর এ দিবসটি পালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নানা দৃশ্যপট দেখতে পেয়েছি। বিশ্বের আদিবাসীদের ন্যায় বাংলাদেশের আদিবাসীদের মানবাধিকার পরিস্থিতিও সুখকর নয়। পাহাড় ও সমতলে আদিবাসীদের জায়গা-জমি জোরপূর্বক বেদখলের ঘটনা ঘটেছে। সারাদেশে আদিবাসী নারীরা বিভিন্ন সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, করোনাকালীন সময়ে আদিবাসী নারীরা পোশাক কারখানা ও বিউটি পার্লারসহ নানা পেশা থেকে কর্মচ্যুত হয়েছেন। মহামারির ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত আদিবাসী খাদ্য সমস্যা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। পার্বত্য রাঙামাটি জেলার সাজেকে হামের প্রাদুর্ভাব এসময় ঐ এলাকার আদিবাসীদের জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। এছাড়াও খাগড়াছড়ি সদরে এক আদিবাসী প্রতিবন্ধী নারীকে নিজ বাসায় দিবাগত রাতে ৮-৯ জন দুর্বত্ত কর্তৃক গণধর্ষণের ঘটনা থেকে আদিবাসী নারীদের বাস্তব চিত্রগুলো ফুটে ওঠে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলার চিম্বুক-থানচি সড়কে ম্রো অধ্যুষিত কাপ্রু পাড়া, দলা পাড়া ও শোং নাম হুং এলাকায় বিতর্কিত সিকদার গ্রুপের অঙ্গ সংগঠন আর এন্ড আর হোল্ডিং লিমিটেডের সাথে যৌথ উদ্যোগে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ‘ম্যারিয়ট হোটেলস এন্ড রিসোর্টস’ নামে একটি পাঁচ তারকা স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগের ফলশ্রুতি হিসেবে এ স্থাপনার প্রয়োজনে পাহাড় কাটা শুরু হলে এবং ৮০০-১০০০ একর জমির এই বিশাল এলাকাজুড়ে এই পাঁচতারা হোটেল ও অ্যামিউজমেন্ট পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নিলে সারা দেশে ব্যাপক প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দার ঝড় ওঠে। পূর্বেও একই জেলার টংকাবতী ইউনিয়নের ম্রো জনগোষ্ঠীর হাজার হাজার একর জমি রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক জবরদখল করে ঐ জনগোষ্ঠীকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হয়েছে। এভাবে প্রতিনিয়ত পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের জায়গা-জমি বিভিন্ন কোম্পানী, রাষ্ট্রীয় বাহিনী, আমলা ও ভূমিদস্যু কর্তৃক নামে-বেনামে বেদখল করা হচ্ছে। এটা স্পষ্টতই চরম মানবাধিকার লংঘন।
আদিবাসীদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠাসহ দেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সমুন্নত করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, সমতলের আদিবাসীদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষে ভূমি কমিশন গঠন ও আলাদা একটি মন্ত্রণালয় গঠন এখন সময়ের দাবি। আর, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও অর্থবহ সমাধানের জন্য অবিলম্বে রোডম্যাপ ঘোষণাপূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন একান্তই জরুরী।
বিবৃতিতে আমরা আদিবাসীদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কার্যকর উদ্যোগ ও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.