আগামী ১২ এপ্রিল থেকে তিন দিন ব্যাপী পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক-বিষু-কে সামনে রেখে সোমবার রাঙামাটিতে বর্নাঢ্য র্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা তাদের যুগ যুগ ধরে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব নিরাপদে পালন করতে পারছে না। বক্তারা অবিলম্বে পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক,অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার দাবী জানান।
বিজু-সাংগ্রাইং-বৈসুক-বিষু-বিহু উদযাপন কমিটির উদ্যোগে রাঙামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গনে র্যালীর উদ্বোধন করেন রাঙামাটি আসনের নির্বাচিত সাংসদ উষাতন তালুকদার। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবধিকার কমিশনের সদস্য বাঞ্চিতা চাকমা। বিজু-সাংগ্রাইং-বৈসুক-বিষু-বিহু উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন,রাঙামাটি সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অরুন কান্তি চাকমা, আদিবাসী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা, চাকমা সার্কেল চীফ দেবাশীষ রায়ের ছেলে রাজ কুমার ত্রিভূবন আর্যদেব রায়, শিক্ষাবিদ শিশির চাকমা। বক্তব্যে দেন বিজু-সাংগ্রাইং-বৈসুক-বিষু-বিহু উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ইন্টু মনি তালুকদার, সাংবাদিক উচিংছা রাখাইন প্রমুখ। অনুষ্ঠান শুরুতে আদিবাসী শিল্পীরা মনোমুগ্ধকর আদিবাসী নৃত্য পরিবশেন করেন।
পরে পৌর সভা প্রাঙ্গন থেকে জেলা শিল্পকলা একাডেমী চত্বর পর্ষন্ত একটি বনার্ঢ্য র্যালী বের করা হয়। র্যালীতে আদিবাসী নারী-পুরুষরা তাদের ঐহিত্যবাহী পোশাকা-আশাক নিয়ে অংশ নেন। এসময় রাস্তার দাড়িয়ে লোকজন র্যালীটিকে স্বাগত জানান।
উদ্বোধকের বক্তব্যে উষাতন তালুকদার এমপি পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি ভাল নয় উল্লেখ করে বলেন, অভাব অনটনে মধ্য দিয়ে এবং সামনের পরিস্থিতি কি দাড়াতে তা নিয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। তাই এমনতর অবস্থায় আজকে পাহাড়ের আদিবাসীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায়, উৎকন্ঠায় আশংকায় মধ্য দিয়ে বিজু-সাংগ্রাইং-বৈসুক-বিষু-বিহু উৎসব উদযাপন করতে হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা মানুষ। পৃথিবীতে মানুষ যে যার অধিকার রয়েছে সেভাবে বেচে থাকতে চাই। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের নেই কোন মান মর্যাদা, নেই অধিকার, আত্নপরিচয়, স্বাধিকার, অস্তিত্ব, ভাষা, সংস্কৃতি ও ভূমি অধিকার। আমরা এদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেচে থাকতে চাই।
তিনি বলেন, পার্বত্য চুক্তি ২০ বছর পরও এখানে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপাররা সমতলে যেভাবে জেলা পরিচালিত হচ্ছে ঠিক সেভাবে এখানে পরিচালনা করছেন। এখানে পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে জেলা পরিষদ, আঞ্চলিক পরিষদ হয়েছে। কিন্তু তার কোন তোয়াক্কা না করলেও তাদের চলে। তারা তাদের ইচ্ছে মত করে জেলা চালাচ্ছেন।
তিনি সরকারের কাছে প্রশ্ন করে আরো বলেন, তাহলে সরকার এই চুক্তি করলেন কেন? এই চুক্তি কি ভাওতাবাজি, আমাদের ভুলানোর জন্যে চুক্তি? আমাদের কি ধোকা দেয়ার জন্য চুক্তি করেছেন? যেখানে চুক্তি আছে, আইনে আছে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ একটা ইউনিট। এখানে আঞ্চলিক পরিষদ সর্বোচ্চ সংস্থা। কিন্তু আঞ্চলিক পরিষদকে মানা হচ্ছে না। সরকার এবং রাষ্ট্র আদিবাসীদের প্রতি বিমাতা সুলভ আচরণ করছে। এটা হবে কেন। আপনারা চুক্তি করলেন কেন। চুক্তি করে কেন ঝুলিয়ে রাখা হলো।
উষাতন তালুকদার এমপি বলেন, কিছু দিন আগে জাতিসংঘের মানবধিকার কমিশনে সরকারের প্রতিনিধি হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যোগদান করেছেন। সেখানে বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের কাছে নানান প্রশ্নে সম্মুখীন হতে হয়েছে। কেন পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে না? কেন ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন কেন বাস্তবায়ন হচ্ছে না?ইত্যাদি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে উনাকে। তাই আমাদের বুঝতে হবে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের সমস্যা এখানে নেই সারা বিশ্বের মধ্যে ছড়িয়ে গেছে। বিশ্বের মানুষ এ সমস্যা কথা জানতে পেরেছেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় মানবধিকার কমিশনের সদস্য বাঞ্চিতা চাকমা বলেন, পার্বত্য চুক্তির ২০ বছর অতিবাহিত হলেও চুক্তি পূর্নাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। আদিবাসীদের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক,সাংস্কৃতিক, মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়নি। প্রতিনিয়ত এখানে মানবধিকার লংঘিত হচ্ছে। সরকারের উচিত চু্ক্তির পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহন করা।
তিনি আরো বলেন, লংগদুতে পাহাড়ী গ্রামে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দশ মাসেও ঘরবাড়ি তৈরী করে দেয়নি সরকার। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ী পরিবারের লোকজনদের চরম মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে এবং প্রধান সামাজিক উৎসব বর্জন করতে হচ্ছে। এ জন্য তাদের সাথে আমিও সহমর্মিতা পোষন করছি।
উল্লেখ্য, আগামী ১২ এপ্রিল থেকে তিন দিন ব্যাপী পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু-সাংগ্রাইং-বৈসু-বিষু-বিহু-চাংক্রান উৎসব শুরু হচ্ছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.