খাগড়াছড়ির পানছড়িতে সঙ্গী সেজে ব্যবসায়ীকে অপহরণ করেছে এক যুবক।তার নাম মো: জাহাঙ্গীর আলম (২৫)। সে উপজেলার ৩নং সদর পানছড়ি ইউপির শনটিলা গ্রামের বাঁচা মিয়ার মেয়ের জামাই। তার আসল ঠিকানা সন্ধীপ উপজেলায়। বাবার নাম মো: ইয়াছিন। প্রায় আট বছর ধরে শনটিলা গ্রামে শ্বশুরালয়ে তার বসবাস।
জানা যায়, পানছড়িতে আদা-হলুদ ও তামাক বিক্রি করতে আসা খাগড়াছড়ি মসজিদ রোডের বাসিন্দা সোনা মিয়ার ছেলে ইমতিয়াজ হোসেন (২৩)’র সাথে সঙ্গী গড়ে তোলে জাহাঙ্গীর। এই সঙ্গী গড়ার পনের দিনের মাথায় শনটিলা এলাকা থেকে তামাক-আদা-হলুদ ক্রয় করে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গেল মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল যোগে রওয়ানা দেয় শনটিলার উদ্দেশ্য। কিছুদুর যেতেই জাহাঙ্গীর মোটর সাইকেল বিদায় করে দিয়ে বলে সামনেই আমার বাড়ি পায়ে হেটে যেতে পারব। সামান্য দুর এগুতেই গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ফেলে ইমতিয়াজের। এরি মাঝে হাজির হয় তার পাঁচ সহপাঠি। গাছের সাথে বেঁধে দিনে দুপুরে কয়েক দফা চলে মারধর করে পঞ্চাশ হাজার টাকা মুক্তিপন দাবী করে।
অপহরণকারীদের মোবাইল দিয়ে বড় বোন কোহিনুর ও তার স্বামী কাসেমকে জানায়, পঞ্চাশ হাজার টাকা না দিলে মেরে ফেলবে আমাকে বাঁচান। ঘন্টাখানেকের মধ্যে পালিত গরু ও ছোট বোনের স্বামী ইদ্রিসের সহায়তায় অপহরণকারীদের দেয়া বিকাশ নাম্বার ০১৮৪৯৮৮৩৬৬৫ এ পঁয়ত্রিশ হাজার ও অন্য একটি নাম্বারে দশ হাজার সহ সর্বমোট পঁয়তাল্লিশ হাজার পাঠায়। শর্ত ছিল কেউ জানলে ইমতিয়াজকে মেরে ফেলা হবে। এ টাকা হাতে পেয়ে আবারো মুক্তিপন দাবী করে দেড় লক্ষ টাকা। প্রথম দফায় আদায়করা পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকা ভাগাভাগি করার ব্যস্ততার ফাঁকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে কৌশলে ইমতিয়াজ পালিয়ে যায়।
কিছু পথ পায়ে হেঁটে একটি ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল যোগে রাত নয়’টায় খাগড়াছড়ি পৌঁছে। প্রচন্ড মারের আঘাতে আহতবস্থায় পরিবারের সদস্যরা তাকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করায়। এরি মাঝে তার অপহরণের খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ সদর হাসপাতালে তার খবরা-খবর নিতে গেলে গুরুতর আহতাবস্থায় এসব চাঞ্চল্যকর তথ্যাদি জানায় সে।
এদিকে পানছড়ি থানা পুলিশও মাঠে নেমে পড়ে রহস্য উদঘাটনে। অফিসার ইনচার্জ মো: মিজানুর রহমান ব্যবহার করতে থাকে ডিজিটাল প্রযুক্তি। ইমতিয়াজের আত্মীয়-স্বজনের সাথে ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার ও অপহরণকারীদের দেয়া বিকাশ নাম্বার সংগ্রহ করে ট্রেকিংয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত হয় এগুলো পানছড়ির টাওয়ার থেকে করা। তথ্য পায় ইমতিয়াজের সাথে জাহাঙ্গীরের ছিল সঙ্গী।
অফিসার ইনচার্জের নেতৃত্বে রাত ২টার দিকে শনটিলা গ্রামে অভিযান চালানো হয় জাহাঙ্গীরের ঘরে। অনেকক্ষন তল্লাশীর পর খাটের নিচের কয়েকটি বস্তার আড়ালে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় তাকে আটক করা হয়। জাহাঙ্গীর বুধবার বিকেলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। এই কাজে তার পাঁচ সহপাঠিও জড়িত ছিল।
পানছড়ি থানা অফিসার ইনচার্জ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ব্যাপারে অত্র থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলার অন্যান্য আসামীদের ধরতে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.